বেকার কোনো যুবককে অতি সহজেই সরকারি চাকরি দিতে পারেন বলে দাবি করতেন তিনি। এ জন্য নিয়োগ পরীক্ষারও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল টাকার। টাকা হাতে পেলেই নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু নিয়োগপত্র মিললেও চাকরি মিলত না কারও। সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এভাবে ১২ লাখ টাকা নিয়ে গা–ঢাকা দিয়েছিলেন সোহেল শিকদার (৪৮) নামের এক ব্যক্তি। প্রতারণার এ কাজে সোহেলকে সহায়তা করতেন তাঁর স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪২) এবং খলিলুর রহমান নামের এক ব্যক্তি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ভাষানটেকের রূপালী হাউস নামে একটি বাড়ির সামনে থেকে সোহেল শিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর একটি দল। এ সময় তাঁর কাছ থেকে চাকরির বিষয়–সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে পিবিআইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে সোহেল শিকদারকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়। তবে তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, সোহেল শিকদার জমি বেচাকেনা ও নির্মাণকাজের ঠিকাদারির কাজ করতেন। তবে তাঁর আসল কাজ হলো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা।
পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, সোহেল শিকদার নিজেকে এমইএস (সেনাবাহিনীর ঠিকাদার) হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। তিনি শিপন প্রতাব (২৪) নামের এক যুবককে সেনা সদরের পূর্ত পরিদপ্তরে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য সোহেল শিপনের কাছ থেকে প্রথমে তাঁর এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন সনদের মূলকপি রেখে দেন। এর কিছুদিন পর চাকরি হয়ে গেছে জানিয়ে শিপনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। চাকরি পাওয়ার আশায় শিপন তাঁর মা ও বোনের গয়না বিক্রি করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোহেলকে তিন লাখ দেন।
টাকা পেয়ে শিপনের হাতে একটি নিয়োগপত্র দেন সোহেল। এই নিয়োগপত্রে ২৪ ফেব্রুয়ারি যোগদানের তারিখ উল্লেখ করা ছিল। যোগদানের তারিখে সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিপন। তখন অপেক্ষা করতে বলে ৩ মার্চ শিপনকে আরেকটি নিয়োগপত্র দিয়ে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন সোহেল। এ অবস্থায় ধারদেনা করে সেদিন আবার তিন লাখ টাকা সোহেলের হাতে তুলে দেন শিপন। টাকা দেওয়ার সময় সোহেলের স্ত্রী সেলিনা ও খলিলুর রহমান সাক্ষী ছিলেন। ওই দিন শিপনের মেডিকেল টেস্ট করাতে মিরপুর–১০ নম্বরে বৈশাখী হোটেলের সামনে যেতে হবে বলে জানান সোহেল। শিপন সেখানে যাওয়ার পর তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরে ১৭ মার্চ মেডিকেল টেস্ট করানো সংক্রান্তে একটি এসএমএস আসে। ১৭ মার্চ মেডিকেল টেস্ট করানোর তারিখে শিপনকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মাটিকাটা চেকপোস্টে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যান সোহেল। ওই দিন রাত ১০টার দিকে শিপনের মোবাইলে মেডিকেল টেস্ট করানোর বিষয়ে আবার একটি এসএমএস আসে। এরপর সোহেলের প্রতারণার আরও তথ্য জানতে পারেন শিপন। পরে ছয় লাখ টাকা ও সব কাগজপত্র ফেরত চাইলে সোহেল গা–ঢাকা দেন। এভাবে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে আরও প্রায় ছয় লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন সোহেল, সেলিনা ও খলিলুর রহমান।
বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মূল সনদ রেখে চাকরিপ্রত্যাশীদের ভয়ভীতি দিয়ে টাকা আদায় করতেন সোহেল ও তাঁর সঙ্গীরা। এ ঘটনায় ভাষানটেক থানায় মামলা করা হয়েছে।