চাকরির দেওয়ার কথা বলে সাক্ষাৎকার, প্রশিক্ষণ সবই হতো চাকরিপ্রার্থীদের। তবে নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে সিকিউরিটি মানি বাবদ অর্ধ লাখ টাকা আদায় করা হতো। আর বেতন দেওয়ার সময়ই যত টালবাহানা। বেতন দাবি করলে উল্টো মানসিক চাপ দিয়ে আরও লোক আনার কথা বলা হতো। লোক আনার পর একইভাবে হতো টাকা আদায়।
এভাবে এমএলএমের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন নাহিদ নজরুল (২৩), রুবেল মিয়া (১৮), মো. জুনায়েদ (১৯) ও নাজমুল হোসাইন (২৪) নামের চার যুবক। এই প্রতারক চক্রকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৮৭ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল।
পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানার লতাবুনিয়া গ্রামের আবু হানিফ (২১) নামের এক যুবককে তাঁর বন্ধু মেহেদী হাসান গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফোন করেন। ফোনে মেহেদী ঢাকায় ১৫ হাজার টাকা বেতনে লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরির করছেন বলে জানান। তাঁকে এই পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে বলেও জানান ওই বন্ধু। চাকরিতে যোগদান করলে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা বাবদ কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা জমা রাখতে হবে। ঢাকায় এসে টাকা নিয়ে মেহেদির সঙ্গে গত ৫ মার্চ উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর বাড়িতে লাইফওয়ে কোম্পানির কার্যালয়ে যান হানিফ। সেখানে মেহেদির সাক্ষাৎকার নেন নাহিদ। চাকরি হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ করে হানিফের কাছ থেকে তাঁর ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফিসহ আরও সাড়ে তিন হাজার টাকা আদায় করা হয়।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রশিক্ষণের কথা বলে হানিফকে উত্তরার আজমপুরে একটি ভাড়া বাসায় আরও সাত-আটজনের সঙ্গে রাখা হয়। বাইরে গেলে মোবাইলে কথা বলার সময় প্রতিষ্ঠানের একজন লোক আবু হানিফসহ অন্যদের অনুসরণ করত। রাতে ঘুমানোর সময় বাইরে থেকে ঘরের দরজার তালা দেওয়া হতো। পরে জানানো হয়, লোক নিয়ে আসতে পারলে তাদের বেতন হবে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নাহিদ, হায়দার কবির, আবদুল কাদের, রুবেল ও জুনায়েদ ট্রেনিং করিয়ে লোক আনার কৌশল শেখাতেন। এই কৌশলে হানিফ নিজের এলাকা থেকে দুজন লোক নিয়ে আসেন। এরপর বেতন হিসেবে চার হাজার টাকা দিয়ে আরও লোক আনার কথা বলা হয় হানিফকে। অন্যদিকে নতুন দুজনের কাছ থেকে একই কৌশলে টাকা আদায় করা হয়। পরে টাকা ফেরত চাইলে হানিফকে ছুটি দিয়ে গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়। একই কৌশলে মিলন, সোলাইমান, মিরাজসহ অসংখ্য যুবক এই কোম্পানির কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় এই চক্রকে আটক করা হয়েছে।