চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকার দুটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একযোগে দুটি মসজিদে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। পরে ওই দুজনের হেফাজতে থাকা আরও ১৪টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা তদন্ত করে দেখছে। গতকাল রাতে সহকারী কমিশনার (বন্দর) জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটি ঈশা খাঁ মসজিদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মসজিদে বাইরের মুসল্লিরাও নামাজ পড়তে আসেন। ওই বিস্ফোরণে পাঁচ থেকে ছয়জন সামান্য আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অবিস্ফোরিত আরও কয়েকটি বিস্ফোরকসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চলছে।
পুলিশ জানায়, আহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির হাসপাতালে এবং আরেকজনকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থিত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা আছেন।
গতকাল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু নগর পুলিশ কমিশনারসহ কয়েকজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ও র্যা বের সদস্য ছাড়া কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। নগরের বিমানবন্দর সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঈশা খাঁ ঘাঁটির অবস্থান বিমানবন্দর সড়কের পাশেই।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর সময় হাতেনাতে রমজান নামের একজনকে আটক করা হয়। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস) তথ্য গোপন রেখে বছর খানেক আগে নৌবাহিনীতে ‘ব্যাটম্যান’ হিসেবে চাকরি নেন। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের কাহালু উপজেলায়। ঘটনাস্থলে তাঁর কাছ থেকে দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
দেবদাস ভট্টাচার্য আরও জানান, মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মান্নান ওরফে সিয়াম নামের আরেকজনকে আটক করা হয়। তিনি মাস ছয়েক আগে ‘বল পিকার’ হিসেবে নৌবাহিনীতে চাকরি নেন। তিনি টাঙ্গাইলের আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পাস করেছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির এক মসজিদে একটি এবং অন্যটিতে দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ একযোগে ঘটানো হয়। ওই সময় জুমার নামাজ প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। এসব বিস্ফোরণে নৌবাহিনীর তিন কর্মকর্তা ও তিন সৈনিক আহত হন। আহত ছয়জনের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং পাঁচজন নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে পুলিশের কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ হাযারী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নামাজ শুরু হওয়ার পর প্রথম রাকাতেই এই হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘সূরা ফাতিহা পড়ার পরই দুটি গ্রেনেড ছুড়ে এই হামলা চালানো হয়েছে।’
এদিকে আটক ব্যাটম্যান রমজান ও বল পিকার মান্নানকে গতকাল দুপুর থেকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের র্যা বের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) হারুন উর রশিদ হাযারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেও নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য গোপন রেখে অষ্টম শ্রেণির সনদ দেখিয়ে ব্যাটম্যানের চাকরি নেন। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার!’
হারুন উর রশিদ হাযারী আরও বলেন, ‘দুটি মসজিদে তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটার পর রমজান ও মান্নানের কাছে থাকা দুটি বান্ডোলিয়া (সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কোমরে রাখা একধরনের বেল্ট, যেখানে গুলি-বোমা রাখা হয়) থেকে আরও ১৪টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। মোট ১৬টি বোমা র্যা বের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় করার জন্য নিয়ে গেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে হাযারী বলেন, ‘রমজান ও মান্নান নিজেদের অনেক তথ্য গোপন রেখে চাকরি নেন। জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে।’
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে চট্টগ্রামে ঈশা খাঁ ঘাঁটিতে হামলার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। এএফপির এ খবর সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইটস টাইমস, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের ডন, দুবাইয়ের খালিজ টাইমসসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশিত হয়েছে।