‘সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতি এবং নৈতিক অবক্ষয় চলছে’ লেখা ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীদের হাতে হাতে লিফলেট দিচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচি পালন করা যুবকের নাম মো. হানিফ। দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করায় তিনি ‘হানিফ বাংলাদেশী’ নামেই বেশি পরিচিত।
ঘুষ-দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিবাদে হানিফ দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান এবং জনসাধারণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করছেন। পাশাপাশি ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশে প্রতীকী লাল কার্ড প্রদর্শন করছেন তিনি।
গত ২ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়ে সফর শুরু করেন মোহাম্মদ হানিফ। আজ দুপুরে তিনি ৬২তম জেলা মানিকগঞ্জে পৌঁছে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপি দিতে গিয়ে আজ তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন তিনি। ২০ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়ে তাঁর সফর শেষ করবেন।
স্মারকলিপিতে হানিফ উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে, সে দলই ঘুষ, দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত ছিল, যা আজ চরম আকার ধারণ করেছে। সমাজ, রাষ্ট্র—সর্বত্রই ঘুষ, দুর্নীতি, সামাজিক, মানবিক, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চলছে। গুজব ছড়িয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। ছোট মেয়েদের ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনায় একে অন্যকে কুপিয়ে হত্যা করছে। নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। পরস্পর দোষারোপ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি অবক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে চলমান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির অবসান এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে এবং প্রতিটি নাগরিক তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে অবক্ষয় নির্মূল সম্ভব।
নোয়াখালী সদরের জাহানাবাদ গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে মো. হানিফ। ভোটাধিকার ও নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গত ১২ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পদযাত্রা করেন তিনি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে জনবহুল এলাকায় গণশৌচাগার স্থাপনের দাবিতে প্রচারাভিযান চালান এই প্রতিবাদী যুবক। গত ৬ মে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও বর্তমান কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে পচা আপেল নিয়ে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়া ভোটাধিকারের দাবিতে সংসদ ভবনের সামনেও অবস্থান নিয়েছিলেন হানিফ বাংলাদেশি।
আজ দুপুরে একান্ত আলাপচারিতায় হানিফ বাংলাদেশি জানান, জেলা প্রশাসকেরা একটা জেলার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাঁরা সুষ্ঠুভাবে দল-মতনির্বিশেষে আইনের শাসন প্রয়োগ করলে সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হবে। তাহলে মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা সম্ভব। তাই তিনি দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন।
তিক্ত অভিজ্ঞতা
তবে এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানান হানিফ। তিনি বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে প্রতিবাদী বিষয়সংবলিত ব্যানার গলায় দেখতে পেয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণী জেলা বিআরটিএ কার্যালয়ের দুর্নীতির কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে থানায় নিয়ে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, তাঁর কার্যালয়ের নিচে দাঁড়িয়ে সেখানে লোকজনের সামনে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই যুবক বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন ঢালাও অভিযোগ করা অনুচিত।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে দুপুরেই হানিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’