রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে এক ইতালীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গুলশানে অনেক লোকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম তাবেলা সিজার (৫০)।
তাবেলা সিজার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও-বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আইসিসিও সারা বিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে পুলিশ মনে করছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিহত ব্যক্তির কিছু খোয়া যায়নি। তাঁর কাছে মোবাইল ফোন ও একটি কাপড়ের ব্যাগে জগিংয়ের কাপড় পাওয়া গেছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সিজার। এ সময় তিন যুবক মোটরসাইকেলে তাঁকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে দুজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়ে। তিনটি গুলিই তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন ধরাধরি করে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলের চার-পাঁচ গজ দূরে ৯০ ও ৮৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিছু ভিক্ষুক ভিক্ষা করেন। এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিতারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার আগে তিনি দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে বসে ছিলেন। হঠাৎ ঠাস ঠাস করে গুলির আওয়াজে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখেন ১৮-১৯ বছরের দুই যুবক এক ব্যক্তিকে গুলি করে অন্তত ১৫-২০ গজ দূরে রাখা একটি মোটরসাইকেলে লাফ দিয়ে উঠে বসেন। তাঁদের গায়ে লাল-সাদা ডোরাকাটা গেঞ্জি ছিল। তাঁরা দ্রুত ৮৩ নম্বর সড়ক ধরে উত্তর দিকে পালিয়ে যান। এ সময় পাশের একটি গাড়ি পার্কিং কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মীরা ধর ধর বলে ধাওয়া দেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক মো. বিল্লাল বলেন, হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তিনি দেখেন এক লোক মাটিতে পড়ে আছেন। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। আহত লোকটি দীর্ঘদেহী হওয়ার কারণে তাঁকে রিকশায় তোলা যাচ্ছিল না। পরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
রাতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলটি হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল আলামত সংগ্রহ করছে। ঘটনাস্থলের উল্টোদিকের রাস্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের কার্যালয়।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাবেলা সিজার নামে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শরীরে প্রাথমিকভাবে তিনটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার খবর শুনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, সম্ভাব্য আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু খোয়া যায়নি বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পনা থেকে ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশ জানায়, তাবেলা সিজার আইসিসিও-বিডির যে কার্যালয়ে চাকরি করতেন, সেটি গুলশান-২-এর ৩০ নম্বর সড়কে অবস্থিত। ৫৪/৫১ নম্বর সড়কের একটি ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। গত রাতে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়েন্দা পুলিশ সিজারের কাছে কারা কারা এসেছে তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছে। আইসিসিও-বিডির একজন প্রতিনিধির কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, সিজার গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি কোথায় ছিলেন তা কেউ বলতে পারেননি। তবে তাঁর কাছে পাওয়া জগিংয়ের ব্যাগ দেখে পুলিশ মনে করছে তিনি জগিং করে বাসায় ফিরছিলেন।
এর আগে ২০১২ সালের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানের ১১৭ নম্বর সড়কে নিজের বাসার কাছে গুলিবিদ্ধ হন সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুলশান থানার উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর এ মামলায় পাঁচ আসামিকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন আদালত। আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।