প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) শেষ দিনে গত রোববার ছিল গণিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যাপক নকল হতে দেখা যায়। নকল সরবরাহ করতে শত শত অভিভাবক পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। কেন্দ্রে থাকা দায়িত্বশীল সবাই ছিলেন নীরব।
পরীক্ষার নকলের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। বিষয়টি নজরে আসতেই প্রশাসন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। আজ বুধবার কমিটি কাজ শুরু করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান হাবীবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত রোববার সকালে সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় পিএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা গেছে, নকলের উৎসব। হল পরিদর্শকের সামনেই নকল দেখে লিখছিল শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার পরিদর্শকেরা ছিলেন নিবর ভূমিকায়। কেন্দ্র সচিবও যেন নির্বাক। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কোনো পদক্ষেপ নেননি। অভিভাবক ও শিক্ষকেরা ভালো ফলাফলের আশায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিজেরাই নকল সরবরাহ করেন।
নকল সরবরাহ করতে শত শত অভিভাবক পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। একটু সময় পেলেই তাঁরা নকলের চিরকুট পরীক্ষার্থীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিলেন । পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক শিক্ষকেরা কেউ কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা পারলে নকল করার সহায়তা করেন। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে নকল করলেও পরীক্ষা কেন্দ্র ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এ সময় কামালেরপাড়া এলাকার এক অভিভাবক মিজানুর রহমান জানালেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে যে যার মতো পারছে নকল দিচ্ছেন, আবার চলে যাচ্ছেন। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে লেখাপড়ায় মান আরও কমে গিয়ে নকলের প্রবণতা বেড়ে যাবে। এতে ভালো শিক্ষার্থী আর মন্দ শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কামালেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের এক স্কুলশিক্ষক জানান, নকলের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, সরকারকে ভালো রেজাল্ট উপহার দিয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি দেখাতেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা এই নকলের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারণে আজ পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে ভালো শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে মুখ ফিরে নিবে।
তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, ‘নকল প্রতিরোধে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু অভিভাবকরাই জোর করে নকল দিচ্ছেন।’
কামালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কামালেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ওই পিএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব শাহিনুর ইসলাম জানান, নকল প্রতিরোধে আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি ।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ দাবি করেন, ‘চেষ্টা করেও পরিবেশ শান্ত করা যাচ্ছে না । আমরা নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে চেষ্টা করছি।’
সাঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানান, পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা কেন্দ্র সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।