যুবদল কর্মী হত্যার মামলা থেকে খালাস পেয়ে চার গরু জবাই দিয়ে মেজবানের আয়োজন করলেন চট্টগ্রামের সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর। তিনি পুলিশ ও র্যা বের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।
যুবদলের কর্মী আজাদ আলী খান হত্যার ঘটনার প্রায় ১৯ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার আকবরসহ ১০ জন আসামি খালাস পান। মামলার রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষীরা মুখ না খোলায় অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সেলিম খান এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল নগরের আউটার স্টেডিয়ামে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে নন্দনকানন এলাকায় আজাদ আলী খানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন হেলাল আকবরসহ তাঁর সহযোগীরা।
ওই হত্যা মামলার বিচার শুরু হতে লাগে সাত বছর। বিচার শুরু হতে না হতেই উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এলে মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকে চার বছর। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও সাড়ে ছয় বছর সেই আদেশ রহস্যজনক কারণে গোপন ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজা তারিক আহমেদ রায়ে আকবরসহ ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন। রায়ে খালাস পাওয়া বাকি নয় আসামি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক কর্মী।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীদের মধ্যে নিহত ব্যক্তির ভাই ও আত্মীয়ও ছিলেন। তাঁরা সবাই সাক্ষ্যে গুলিতে আজাদ আলী খান নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও কে বা কারা গুলি করেছে, তা জানেন না বলে আদালতকে জানান। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি।
পিপি আরও বলেন, মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি প্রত্যাহার করতে সুপারিশ করলে প্রত্যাহারের জন্য দুই দফায় আদালতে আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু তা নাকচ করে দেন আদালত।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নিহত আজাদ আলী খানের ভাই নওশাদ আলী খান বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন, আমরা কী বলব?’
গতকাল বেলা একটার দিকে বিশাল বহর নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন আকবর। বেলা দুইটায় রায় ঘোষণার পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে প্রায় ২০০ কর্মীর বহর নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। পরে দুপুরে নগরের লাভ লেনের তিলকা কমিউনিটি সেন্টারে চারটি গরু দিয়ে মেজবান দেন।
জানতে চাইলে আকবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপদে ছিলাম, তাই চার গরু দিয়ে মেজবান দিয়েছি মিসকিনদের জন্য। ১৪টি এতিমখানায়ও মাংস দিয়েছি। আমি নির্দোষ ছিলাম তাই খালাস পেয়েছি। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে আমাকে ওই মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
সাক্ষীরা মুখ না খোলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি কাউকে ভয়ভীতি দেখাইনি। যা সত্য, সাক্ষীরা তা-ই বলেছেন।’
মেজবানে আসা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আকবর ভাই দাওয়াত দিয়েছেন। তাই এসেছি।’
নগরের সিআরবি এলাকায় রেলের দরপত্র নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুই দলে গত বছরের ২৪ জুন সংঘর্ষে এক শিশুসহ দুজন নিহত হন। ওই ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য পদ থেকে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়া আকবর চৌধুরী চট্টগ্রাম পুলিশ ও র্যা বের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার জানান, সর্বশেষ ২০০৯ সালে চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হয়। ওই তালিকায় ৫৫ নম্বরে আকবরের নাম আছে।