মোস্তফা কামাল পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। এক দশক আগে তিনি মায়ের নামে একটি ক্লিনিক খোলেন। তাঁর ক্লিনিকে প্রসূতি মা ও অ্যাপেন্ডিক্স রোগীর অস্ত্রোপচার হতো। প্রথমে চিকিৎসকই অস্ত্রোপচার করতেন। পরে অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের সঙ্গে থাকা শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি অতিথি চিকিৎসকের সঙ্গে থেকে অস্ত্রোপচারও করতেন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মহিমা ক্লিনিকের এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মোস্তফা কামাল গ্রেপ্তার হওয়ার পর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পীযূষ কুমার চৌধুরী ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভুয়া চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাঁকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া উপজেলার সাফাবাজারের হাজী আবদুর রাজ্জাক সার্জিক্যাল ক্লিনিকের ভুয়া চিকিৎসক আমির হোসেন ভূইয়াকে (৪৫) ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। স্থানীয় সৌদিপ্রবাসী হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসক আমির হোসেন ভূইয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অস্ত্রোপচার করার জন্য ক্লিনিকের মালিক মনির হোসেনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ অভিযানে অংশ নেয় র্যাব-৮–এর একটি দল।
দণ্ডাদেশ পাওয়া মোস্তফা কামালের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার সোনাখালী গ্রামে। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পীযূষ কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে অভিযান চালায়। আমি অ্যাপেন্ডিক্সের রোগী সেজে মহিমা ক্লিনিকের মালিক মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মোস্তফা কামাল আমাকে জানান, প্রথমে তিনি রোগীর রোগসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখবেন। পরে চিকিৎসক নজরুল ইসলামের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করবেন। এরপর মহিলা ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোগীর অস্ত্রোপচারে মোস্তফা কামালের অংশ নেওয়ার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাঁর ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক নেই। অতিথি চিকিৎসক দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে অস্ত্রোপচারে মোস্তফা কামালও অংশ নেন। এ ছাড়া আমির হোসেন ভূইয়া নামের এক ভুয়া চিকিৎসক হাজী আবদুর রাজ্জাক সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও সৌদিপ্রবাসী হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতেন। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁদের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ জুন রাতে পিরোজপুর পৌরসভার ভাইজোড়া গ্রামের একটি ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসকের অস্ত্রোপচারে মো. তুষার শেখ (১৫) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তুষার শেখ পিরোজপুর পৌরসভার ঝাটকাঠি গ্রামের মো. সোহাগ শেখের ছেলে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই ভুয়া চিকিৎসক আলী হাসান ওরফে লিয়ন (৩০) ও তাঁর ছোট ভাই আলী ইমাম ওরফে অন্তু (২২) কারাগারে রয়েছেন।
মৃত তুষারের বাবা সোহাগ শেখ জানান, ২৪ জুন বিকেলে তুষার শেখের ডান পা ভেঙে যায়। এরপর তাঁকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। ওই দিন রাত নয়টার দিকে খুলনায় নেওয়ার জন্য তুষার শেখকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলে চালক কবির হোসেন সুচিকিৎসার কথা বলে তাকে পৌরসভার ভাইজোড়া গ্রামের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে সাবেক পৌর কাউন্সিলর প্রয়াত আবদুস সালামের বাড়ির বৈঠকখানায় পিরোজপুর সদর হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট শচীন রায়, নৈশপ্রহরী মো. মাজেদ ও আবদুস সালামের দুই ছেলে আলী হাসান ও আলী ইমাম তুষার শেখের ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করেন। এরপর তুষার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসকের মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের কথা শুনছি। এ ধরনের চিকিৎসক ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিগগিরই পদক্ষেপ নেব।’