কে শিরিন আর কে রেখা?

>

* মাদক মামলা
* যশোরে ১০ দিন ধরে কারাগারে এক নারী
* কিন্তু তাঁর দাবি, তিনি নিরপরাধ
* প্রকৃত আসামি তাঁর সাবেক সতীন

যশোরে এক নারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, ওই নারীর নাম শিরিন। তিনি মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তবে ওই নারী বলছেন, তিনি শিরিন নন। তাঁর নাম রেখা খাতুন। মামলার প্রকৃত আসামি তাঁর সাবেক স্বামীর প্রথম স্ত্রী। তিনি জামিন নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

ওই নারীকে ২০ মার্চ গ্রেপ্তার করেন যশোর কোতোয়ালি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুজ্জামান। ওই নারীর দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখনো নিশ্চিত তিনিই প্রকৃত আসামি। তাঁর নামই শিরিন। তারপরও আদালতের নির্দেশে আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

আদালত, আইনজীবী, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থাকা নারী যশোর শহরের রেলগেট চাঁচড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের সাবেক স্ত্রী। দুজনেরই সেটা ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। শহীদুলের প্রথম স্ত্রীর নাম শিরিন বেগম। নথিপত্রে তিনিই মামলার আসামি। বিয়ের দুই বছর পর শহিদুল ও রেখার ছাড়াছাড়ি হয়।

শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিরিন আমার প্রথম স্ত্রী। রেখাকে আমি বিয়ে করেছিলাম, কিন্তু দুই বছর পর তালাক হয়ে যায়। শিরিন ছয় বছর ধরে লেবাননে অবস্থান করছেন। এর আগে দুই বছর সৌদি আরবে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশ শিরিন ভেবে রেখাকে গ্রেপ্তার করেছে।’

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল পুলিশ শহিদুলের বাড়ি থেকে শিরিনকে হেরোইনসহ আটক করে। এ ঘটনায় শিরিন ও শহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন যশোর কোতোয়ালি থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) কুমকুম নাজমুন নাহার। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে আট বছর আগে শিরিন দেশের বাইরে চলে যান। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত শিরিনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। শহিদুলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আবদুস সহিদ।

রেখাকে কারাগারে পাঠানোর পর ২১ মার্চ যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে এই মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন আইনজীবী সহিদ। এই পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুজ্জামানকে তলব ও আসামিকে ২৪ মার্চ আদালতে হাজির করতে বলেন বিচারক মো. নাজির আহমেদ। ওই দিন শুনানির সময় আইনজীবী সহিদ আদালতে রেখার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট দাখিল করেন। আদালত পুলিশ সুপারকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়ে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।

আইনজীবী সহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছি, কারাগারে থাকা নারীর নাম রেখা খাতুন। প্রকৃত আসামি শিরিন বেগম। তিনি ভিন্ন ব্যক্তি।’