অভিযুক্ত ওই কর্মচারীর নাম নজরুল ইসলাম। তিনি বিআরটিএ কার্যালয়ে অস্থায়ী কর্মচারী (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে কাজ করেন।
সেবা পেতে কর্মচারীদের ঘুষ দিতে হয়—বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) শরীয়তপুর কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পুরোনো। মাঝে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক কর্মচারীকে কার্যালয় থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। সম্প্রতি ওই কর্মচারী আবার কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আবারও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ওই কর্মচারীর নাম নজরুল ইসলাম। তিনি বিআরটিএ কার্যালয়ে অস্থায়ী কর্মচারী (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি নজরুলের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও এই প্রতিবেদককে দেখান এক গ্রাহক। তাতে দেখা যায়, গত ২১ অক্টোবর এক ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়ার জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা চুক্তি করেন নজরুল। গ্রাহক তাঁকে এক হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা পরীক্ষার আগে পরিশোধ করতে বলা হয়। ওই টাকা জাজিরার কাজিরহাট শাখার এনআরবি ব্যাংকের এক কর্মচারীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে নজরুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেইনি। যদি কেউ খুশি হয়ে কিছু দেয়, তা নিয়ে থাকি।’ ভিডিওতে টাকা নিতে দেখা গেছে, এমন প্রশ্ন করলে কোনো জবাব দেননি তিনি।
এর আগেও নজরুলের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল। ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল ‘ঘুষ ছাড়া মেলে না সেবা, ভোগান্তিতে গ্রাহকেরা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন নজরুলকে কার্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি আবার যোগদান করেছেন।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, কার্যালয়টিতে লোকবলের সংকট। এতে ওই দপ্তরের কর্মকর্তারা নজরুল ও ওবায়দুর নামের আরেক ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। নজরুল পাঁচ বছর, আর ওবায়দুর দুই বছর ধরে কাজ করছেন। তবে নজরুল ও ওবায়দুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যানবাহনের মালিক ও চালকদের অভিযোগ, প্রতিটি সেবার জন্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় তাঁদের। টাকা না দিলে সেবা পাওয়া যায় না।
জাজিরার ডুবিসাহেবের গ্রামের বাসিন্দা হিমেল আহম্মেদ গত ৫ সেপ্টেম্বর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে পরীক্ষামূলক লাইসেন্স (লার্নার) গ্রহণ করেন। চূড়ান্ত লাইসেন্স পেতে তাঁর কাছে সাড়ে আট হাজার টাকা দাবি করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ দেওয়া হয়। ওই দিন পরীক্ষা দিতে এসে দেখেন তাঁর নাম তালিকায় নেই। তখন নজরুল ও ওবায়দুরের সঙ্গে হিমেলের সাড়ে আট হাজার টাকায় চুক্তি হয়। গত ২১ অক্টোবর তিনি নজরুলকে ঘুষের টাকা দেন। হিমেল বলেন, ‘প্রথমে টাকা না দেওয়ায় আবেদন ফেলে রাখা হয়। তখন বাধ্য হয়ে তাঁদের ঘুষের টাকা দিতে রাজি হই।’
গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুর বলেন, ‘বিআরটিএ থেকে কোনো বেতন পাই না। সেবাপ্রার্থী খুশি হয়ে যা দেন, তাই নিয়ে থাকি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’
বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুষ গ্রহণের ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক জি এম নাদির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিআরটিএর কেউ ঘুষ নেন, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই। ‘ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি।