সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে শরীফুলকে ব্যাংক খাতের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জামিন নিয়ে এখন পলাতক।
চাকরি করতেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে। তবে নিজের ও স্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে ১১টি। এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য পর্যালোচনা করে সিআইডি বলেছে, শরীফুল ২০১৮ সালের মার্চে এক দিনের মধ্যে দুটি ব্যাংকের ২৭ জন গ্রাহকের সাড়ে ১২ লাখ টাকা তুলে নেন। তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া এড়াতে পরচুলা ও বিশেষ ধরনের চশমা পরতেন।
এই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম (৩২)। সুপারশপে কেনাকাটা করতে যাওয়া গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ব্যাংকের এটিএম কার্ড তৈরি ও টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাঁকে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার বনানী থানায় মামলা করা হয়।
তদন্ত শেষে সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) যে প্রতিবেদন আদালতকে দিয়েছে, তাতে শরীফুলকে ব্যাংকের এটিএম ব্যবস্থায় লেনদেনের ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যদিও তিনি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে পলাতক। গ্রেপ্তারের দুই মাসের মাথায় তিনি জামিন পান।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত শরীফুলের জামিন বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শরীফুলের বিরুদ্ধে বনানী থানায় করা অর্থ পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির পরিদর্শক মো. শাহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শরীফুল একজন পেশাদার অপরাধী। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রাহকের তথ্য চুরি করে হুবহু এটিএম কার্ড তৈরি করতেন। পরে সেই কার্ড দিয়ে গ্রাহকের টাকা তুলে নিয়ে তা নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন।
সিআইডি জানিয়েছে, শরীফুল নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে যেমন টাকা রাখতেন, তেমনি কয়েকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলেও টাকা রেখেছেন। সব মিলিয়ে ১১টি ব্যাংক হিসাবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত লেনদেন হয় প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ওই ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল সাড়ে ১০ লাখ টাকার মতো। শরীফুলের স্ত্রী শামীমা পেশায় গৃহিণী হলেও তাঁর নামে গাড়ি রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, শরীফুল রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ। চার বছর আগে ঢাকার বনানীর একটি সুপারশপে তিনি পাঁচ হাজার টাকা বেতনে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য থাকত গ্রাহকের তথ্য চুরি। তাঁর হাতে থাকত ডিজিটাল ঘড়ি। ঘড়িতে সংযুক্ত করা ছিল বিশেষ কার্ড রিডার। গ্রাহক লেনদেনের সময় যখন কার্ডের পিন নম্বর দিতেন, তখন তা ঘড়িতে রেকর্ড হয়ে থাকত। পরে সেই পিন নম্বর দিয়ে বাসায় বসে এটিএম কার্ড তৈরি করতেন তিনি।
শরীফুলের বাসা থেকে সিআইডি কার্ড তৈরির বিভিন্ন যন্ত্র জব্দ করে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য পর্যালোচনা করে সিআইডি বলেছে, শরীফুল ২০১৮ সালের মার্চে এক দিনের মধ্যে দুটি ব্যাংকের ২৭ জন গ্রাহকের সাড়ে ১২ লাখ টাকা তুলে নেন। তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া এড়াতে পরচুলা ও বিশেষ ধরনের চশমা পরতেন।
সিআইডি আরও বলছে, শরীফুলের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নয়টি জালিয়াতির মামলা থাকার তথ্য মিলেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে তিনি প্রথমে মামলার আসামি হন। কখনো তিনি নিজেকে মিঠু রহমান, কখনো নাজমুস সাকিব, কখনো তৌফিকুর রহমান বলে পরিচয় দিতেন। এসব নামে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেছেন তিনি। তবে নিজের নামে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেননি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত শরীফুলের জামিন বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।