করোনা শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে বুথ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্থায়ী স্থাপনা তৈরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সামগ্রী নিয়েছিলেন জোবেদা খাতুন হেলথকেয়ারের (জেকেজি) প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী। প্রায় তিন মাস ধরে কাজ করলেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি কোনো টাকা দেননি। উল্টো টাকা চাইতে গেলে একটি প্রতিষ্ঠানের ৯ জন কর্মীকে বেধড়ক পেটান। এরপর তাঁদের নামে মামলাও দেন।
আরিফুল হকের সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা এমন অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার কাজ করতেন আরিফুল। সে কারণে দাপট দেখাতেন। গেল জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ)-২০২০ অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার কাজও ওভাল গ্রুপের ব্যানারে তিনি করেছেন। জেকেজি ছিল এই ওভাল গ্রুপেরই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
করোনা পরীক্ষার জন্য বাসা থেকে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করা এবং পরীক্ষা ছাড়াই ফলাফল দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ আরিফুল হক চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী সাবরিনা চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রিমান্ড শেষে আরিফুলকে রোববার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর সাবরিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে গতকাল। গোয়েন্দা পুলিশ, আরিফুলের পরিচিতজন এবং পেশাজীবীদের যোগাযোগের মাধ্যম লিংকড ইন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, আরিফুলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। তাঁর বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা। মা-বাবা দুজনই কানাডায় আরিফুলের বোনের সঙ্গে থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আরিফুল চলে যান সাইপ্রাসে। সেখানে একটি পাবে কাজ করতেন। দেশে ফিরে হোটেল র্যাডিসন ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে কাজ করেন। ঢাকা ক্লাবেও কাজ করেছেন ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে আরিফ ওভাল এড নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন।
গত ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে করোনভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে জেকেজি। রাজধানীর তিতুমীর কলেজে তারা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু করে। সেখানে সাউন্ড সিস্টেম এবং এলইডি স্ক্রিন সরবরাহ করে লালবাগের ইথার সাউন্ড সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মনিরুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জানুয়ারিতে বিডিএফের অনুষ্ঠানেও তিনি আরিফের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। সেই কাজের আড়াই লাখ টাকা বকেয়া ছিল। সেই বকেয়া পরিশোধ করে আরিফ তাঁকে কাজ করতে বলেন। জানান, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তাই এবার আর টাকার সমস্যা হবে না। অগ্রিম টাকা দেওয়ারও আশ্বাস দেন। কিন্তু জিনিসপত্র তিতুমীর কলেজে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরিফ উল্টে যান। টাকা চাইলে তাঁর ৯ জন কর্মচারীকে কাঠ দিয়ে বেধড়ক পেটান। এরপর তাঁদের নামে বনানী থানায় ল্যাপটপ চুরির মামলা দেন। উপায় না দেখে সমঝোতায় যান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জেকেজির এই জালিয়াতির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।