কমলাপুরে রূপালী ক্লাবে পরিকল্পনা

পরিকল্পনার প্রথম বৈঠকে ছিলেন ছয়জন। তাঁদের একজন আরফান উল্লাহ আটক। আরও দুজন নজরদারিতে। অস্ত্র উদ্ধার একটি।

জাহিদুল ইসলাম

ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যার ঘটনায় আরফান উল্লাহ (দামাল) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে একটি রিভলবার উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি সূত্র জানায়, জাহিদুল হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ‘শুটার’ (যিনি গুলি করেন) মাসুমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। এ ছাড়া মোল্লা শামীম ও ফারুক খান নামের দুজন সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে। তাঁরা পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সহযোগী। এই দুই সন্দেহভাজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি আরফান উল্লাহকে আটক করে।

ডিবি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরফান উল্লাহর এখন দলীয় কোনো পদ নেই। তবে এলাকায় তিনি যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে রূপালী সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় (রূপালী ক্লাব নামে পরিচিত) তাঁর আড্ডা ছিল। আরফানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই ক্লাবের পেছনের বস্তির একটি ঘর থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়।

আরফান বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহর ভাই। ভাইয়ের আটকের কথা শুনেছেন উল্লেখ করে আহকাম উল্লাহ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আরফান ২০০০ সালে বিদেশে যাওয়ার আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালে দেশে ফেরেন। তিনি বলেন, ‘সে (আরফান) আমাদের পরিবারকে ডুবিয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’ আহকাম উল্লাহ নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক উপকমিটির সদস্য বলে দাবি করেন।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রিফাত মোহাম্মদ শামীম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম হত্যার পেছনে পলাতক শীর্ষ পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমরা অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছি। অস্ত্রটি ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার পর জানা যাবে এই হত্যার ঘটনায় সেটি ব্যবহৃত হয়েছে কি না।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, রূপালী ক্লাবে বসে জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই বৈঠকে অপরাধজগতের তিন শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক, জিসান ও বিকাশ–প্রকাশ গ্রুপের ছয়জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা, মোল্লা শামীম, ফারুক খান ও আরফান উল্লাহ। অপর দুজনের নাম সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলতে রাজি হয়নি।

সূত্রটি আরও জানায়, ওই বৈঠকে মোল্লা শামীম ও ফারুক খানকে ‘শুটার’ ভাড়া করার দায়িত্ব দেন মুসা। ডিবির ধারণা, ঘটনার দিন মোল্লা শামীমের মোটরসাইকেলে করে শুটার মাসুম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।

ডিবির একটি সূত্র বলছে, মাসুম হত্যাসহ পাঁচটি মামলার আসামি। তাঁকে ছয় লাখ টাকায় জাহিদুলকে হত্যার জন্য ভাড়া করা হয়। একই সঙ্গে মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাসও দেওয়া হয়। এ জন্য মুসা তাঁর আইনজীবীর কাছেও নিয়ে যান মাসুমকে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুর এলাকার ব্যস্ত সড়কে গাড়িতে থাকা জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন রিকশা আরোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল।

মতিঝিল এলাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় রাজনীতিতে বিরোধ ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাসহ নানামুখী দ্বন্দ্বের জেরে জাহিদুলকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।