কতশত গল্পের মেয়েটির পরিচয় আজ শুধুই ‘কঙ্কাল’

লাশ
প্রতীকী ছবি

কলেজপড়ুয়া মেয়েটির জীবনে কত কত গল্প ছিল। সেসব গল্প ছাপিয়ে হঠাৎ এক সকালে মেয়েটি নিখোঁজ সংবাদ হয়ে যান। খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। ২ মাস ২৪ দিন পর পরিবারের এ অবস্থার অবসান হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে মেয়েটির সন্ধান মেলে। তবে জীবিত নয়, কঙ্কাল হিসেবে। মেয়েটির নাম মিম খাতুন (১৮)। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া গ্রামের মতিয়ার খাঁ ওরফে মধু খাঁর মেয়ে। তিনি স্থানীয় আমলা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় মাথাভাঙ্গা সেতুর কাছ থেকে একটি কঙ্কাল, আশপাশে থাকা সালোয়ার-কামিজ ও একটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতরে একটি পাসপোর্ট আকারের অস্পষ্ট ছবি ও চার বছর আগের জেএসসি সনদ পাওয়া যায়। এই সনদের সূত্র ধরে কঙ্কালটি মিমের বলে শনাক্ত হয়। মৃত্যুরহস্য জানতে ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কঙ্কালটি রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মিমের বাবা মতিয়ার খাঁর সঙ্গে আজ রোববার বিকেলে যখন মুঠোফোনে কথা হয়, তখন তিনি দামুড়হুদা থানায় ছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিমের মা সারু জাহান। বাবা জানালেন, তিনি দিনমজুর। তিন মেয়ের মধ্যে মিম সবার ছোট ছিলেন। বাকি দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে।

মতিয়ার খাঁর ভাষ্য, গত ১৭ আগস্ট মিম বাড়ি থেকে তাঁর নানাবাড়ি মিরপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে যান। সেখানে এক দিন থেকে পরদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে সময় কয়েক দিন ধরে তিনি আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ আশপাশের গ্রামে মেয়ের খোঁজ করেছেন। মেয়েকে না পেয়ে ঘটনার ১৫-১৬ দিন পর দৌলতপুর থানায় গেলে পুলিশ কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা নেননি বলে তাঁর অভিযোগ।

তবে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, মিমের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কোনো জিডি বা মামলা করতে কেউ আসেননি। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দামুড়হুদা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন তাঁরা।

মতিয়ার খাঁর ভাষ্য, মিমের কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে রোববার ভোরে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সারু জাহান দামুড়হুদা মডেল থানায় যান। থানায় পৌঁছে তাঁরা মেয়ের জামা, ওড়না ও জুতা থানার একটি ভবনের ছাদে রোদে শুকানো হচ্ছে দেখতে পান। তবে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া মেয়েকে দেখতে পাননি মা–বাবা।

মতিয়ার বলেন, ‘মেয়েকে কয় মাস দেখতে না পাইয়ি সারু কাইন্দি আহাজারি করিছি। অসুস্থ হয়ে পড়িছে। এখন জামা-জুতা নিই মুনকে সবুর দিছি।’ বাবা মনে করেন, কেউ তাঁর মেয়েকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। বিচার হলে আর দশজনের শিক্ষা হবে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবদুল খালেক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে যে কলেজছাত্রী মিমকে বেড়ানোর কথা বলে নির্জন স্থানে নিয়ে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। লাশটি ভাসতে ভাসতে দামুড়হুদায় চলে আসে এবং নদীর পানি কমে যাওয়ায় কঙ্কাল বেরিয়ে আসে। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা নেওয়া হচ্ছে।