কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের ফুলছড়ি বনাঞ্চলের পাশে মরিচখেতে নেমেছিল একটি বন্য হাতি। এতে ফসলের ক্ষতি হবে ভেবে হাতিটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের দাবি, বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় হাতিটি খাদ্যের সন্ধানে পাশের মরিচখেতে নেমেছিল। গুলি লাগে হাতির বাঁ চোখের একটু ওপরে। গত রোববার রাত নয়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে হাতির মরদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
এর আগে গত নভেম্বরে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, চকরিয়া ও রামুর বনাঞ্চলে বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আরও চারটি বন্য হাতি। পাহাড় কাটা ও বনাঞ্চল উজাড়ের কারণে সেখানে খাদ্যসংকটে পড়েছে বন্য হাতি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০ ডিসেম্বর দুপুরে স্থানীয় কাঠুরিয়ার মাধ্যমে বন বিভাগের কর্মীরা জানতে পারেন, ফুলছড়ি বন রেঞ্জের রাজঘাট বিট এলাকায় একটি বন্য হাতির মরদেহ পড়ে আছে। বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লেবু লাল দত্তের নেতৃত্বে ময়নাতদন্তকারী একটি দল।
দলে ছিলেন চকরিয়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান ও রাজঘাট বনবিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা হাতির ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর মৃত হাতিটি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
ময়নাতদন্ত দলের সঙ্গে থাকা সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গুলি করেই এই নারী হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। হাতির বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হতে পারে। ১৭ ডিসেম্বর হাতিটিকে গুলি করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারে ময়নাতদন্তকারী দল।
স্থানীয় রাজঘাট বনবিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান বলেন, স্থানীয় কাঠুরিয়ার মাধ্যমে হাতিটিকে গুলি করার খবর বন বিভাগ জানতে পারে ২০ ডিসেম্বর দুপুরে। খাদ্যের সন্ধানে মরিচখেতে নেমেছিল হাতিটি। তাতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় গুলি করে হত্যা করে হাতিটিকে। কারা এ ঘটনায় জড়িত, তার অনুসন্ধান চলছে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৫ নভেম্বর সকালে রামুর জোয়ারিয়ানালার জুমছড়ি বনাঞ্চলে গুলি করে হত্যা করা হয় একটি বন্য হাতিকে। হাতির ময়নাতদন্ত করা রামু উপজেলা প্রাণী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহজাদা মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, হাতিটির পায়ে ও দেহের বিভিন্ন স্থানে আটটি গুলির জখম ছিল।
পরের দিন ১৬ নভেম্বর রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ির খরলিয়াছড়ার শাইরার ঘোনা এলাকায় গুলি করে ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয় আরও একটি বন্য হাতি। এর কয়েক দিন আগে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এবং চকরিয়ার বনাঞ্চলে গুলি করে হত্যা করা হয় আরও দুটি হাতি।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, কক্সবাজারের বনাঞ্চলে গত নভেম্বর মাসের ১০ দিনের ব্যবধানে চারটি বিপন্ন এশিয়ান হাতিকে গুলি করে ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বনাঞ্চলের আশপাশের খেতের ফসল ও ধান রক্ষার জন্য কিছু ব্যক্তি গুলি করে বন্য হাতিগুলো হত্যা করছে। খেতে যেন বন্য হাতি নামতে না পারে, সে জন্য অনেকে আশপাশের এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ টেনে রাখে। তারে আটকা পড়েও হাতির মৃত্যু হচ্ছে। গত দুই বছরে বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ১৪টি বন্য হাতি।