গুলিস্তানে শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পুলিশের ওপর বোমা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এ কাজটি যে কোনো জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে এখনো তারা কোনো মন্তব্য করতে চায় না।
গত ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে আটটার দিকে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় আততায়ীরা। ওই হামলায় ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৩৭) ও লিটন (৪২) এবং কমিউনিটি পুলিশের সদস্য আশিক (২৮) আহত হন। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রচারকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, হামলাটি ছিল দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পুলিশের ওপর আইএসের চালানো প্রথম হামলা। প্রথমে ককটেল বলা হলেও পরে পুলিশ জানায়, যে বস্তুটি দিয়ে হামলা চালানো হয়, সেটি ইমপ্রুভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বোমা।
ওই ঘটনায় পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছেন সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের উপপরিদর্শক মো. সোলায়মান গাজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ওই হামলার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনাস্থলের কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে ফুটেজটি পাওয়া গেছে, সেটি কিছুটা দূরের। তা ছাড়া হামলার সময় ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ ছিল না।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ও অ্যান্টি টেররিজম ব্যুরোও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মধ্য এপ্রিল থেকেই পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। তাদের কাছে এ ধরনের হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যও ছিল। সিরিয়ার বাঘুজে আইএসের পতনের পরই বিভিন্ন দেশের পুলিশের ওপর হামলার ঘোষণা দিয়েছিল ইসলামিক স্টেট। তা ছাড়া শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশেও জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে তাঁরা খবর পাচ্ছেন। তবে সংগঠনগুলোর বড় কোনো হামলা চালানোর ক্ষমতা নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।
গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার পরপরই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের মতামত নেওয়া হয়। এই দলের প্রধান ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলন, হামলাকারীরা যে বিস্ফোরকটি ব্যবহার করেছে, সেটি ককটেল ছিল না, বোমা ছিল। তবে বানানোয় ত্রুটি থাকায় যে মাত্রায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি।