রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে কয়েকজন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার তা ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফের চলল হামলা, যতক্ষণ না রক্তাক্ত হচ্ছেন শরীফ। বরগুনা শহরে দিনেদুপুরে এমন নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন রিফাত শরীফ (২২)।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দুজনের নাম বলতে পেরেছেন নিহত ব্যক্তির বন্ধুরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রিফাত শরীফ আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আয়েশাকে বিয়ে করা নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ কারণে রিফাত শরীফ প্রতিদিন আয়েশাকে কলেজে পৌঁছে দিতেন। স্ত্রীকে কলেজে দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন রিফাত শরীফ। প্রথমে তাঁকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে রিফাত শরীফ বরগুনা পুলিশ লাইনস এলাকার আয়েশা আক্তার ওরফে মিন্নিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে আয়েশাকে নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামের এক তরুণ তাঁকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। একপর্যায়ে নয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করেন। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে নয়নের বিরোধ হয়। এর জেরে নয়ন ও তাঁর বন্ধু রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, রাব্বি আকন ফরাজীসহ কয়েকজন মিলে তাঁর ছেলে রিফাত শরীফকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যান।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রিফাতের বুক, ঘাড় ও পিঠে গুরুতর আঘাত থাকায় প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে হাসপাতালে আনার পর দ্রুত তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। রিফাতের লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। কাল বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রিফাতের চাচা সালাম শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মানুষ এভাবে কাউকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে, আগে ভাবিনি। আমার ভাইয়ের ছেলেকে ওরা এত নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা...।’ কথা শেষ করতে পারেননি সালাম শরীফ, কাঁদতে থাকেন তিনি।
বরগুনার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে তাঁদের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নয়নকে গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশ ও ডিবি সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছে। নয়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক মামলা আছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন মোবাইল ফোনে রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।