এবার টিলার ঢাল খুঁড়ে মিলল ২২ 'বোমা যন্ত্র'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জলমগ্ন এলাকায় ছিল পাইপ। কিন্তু যন্ত্র দেখা যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে টিলার ঢালের ঝোপঝাড়ের মধ্যে পাওয়া যায় সদ্য খোঁড়া মাটি। সেই মাটি খুঁড়তেই দেখা গেল লুকিয়ে রাখা হয়েছে পাথর উত্তোলনের অবৈধ যন্ত্র ‘বোমা মেশিন’।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী উৎমা পাথর কোয়ারি এলাকায় এভাবে ‘শ্যালো’ নামে পরিচিত ২২টি মেশিন ও ৫ হাজার ফুট পাইপ উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্যের নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের এই অভিযান চালানো হয়।

এর আগে ৭ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় অবৈধ যন্ত্রের উৎস ধ্বংসে টাস্কফোর্সের অভিযানে মাটিচাপা দিয়ে রাখা ১৭টি যন্ত্র উদ্ধার করে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল। অবৈধ যন্ত্র চালানোর উৎসগুলো চিহ্নিত করে প্রথম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গত ১০ অক্টোবর থেকে গত এক মাসে পাঁচটি অভিযানে প্রায় দেড় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়েছে।

১০ অক্টোবর শাহ আরেফিন টিলায় প্রথম অভিযান হয়। তিনটি ড্রামে রাখা বোমা মেশিন চালানোর ৩০০ লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়েছিল। ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় অভিযানে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার বোমা মেশিনের যন্ত্রাংশ ধ্বংস ও জব্দ করা হয়েছিল। ৩১ অক্টোবর ১৫টি ‘শ্যালো’, ১৫০০ ফুট পাইপ, সাতটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়েছিল। এ সময় ট্রাক্টরের চাকা ফুটো করে যন্ত্র চালনায় জ্বালানি ব্যবহারের আসবাবসহ পাইপ মাটিতে পুঁতে আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। ৭ নভেম্বর চতুর্থ দফা অভিযানে অবৈধ যন্ত্র রাখার পন্থা উদ্ঘাটন হয়। শাহ আরেফিন টিলায় ওই অভিযানের খবর পেয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবৈধ যন্ত্র বের করে তা আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল।

>

উৎমা পাথর কোয়ারি
গত এক মাসে পাঁচটি অভিযানে প্রায় দেড় কোটি টাকার পাথর তোলার যন্ত্রপাতি ধ্বংস করা হয়েছে

ইউএনও সুমন আচার্য প্রথম আলোকে জানান, ৭ নভেম্বরের অভিযানের খবর পেয়েই শাহ আরেফিন টিলায় অবৈধ যন্ত্র আড়াল করতে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতায় গতকাল উৎমা এলাকায় অভিযানে গেলে পাইপ পাওয়া যায়। কিন্তু যন্ত্রের দেখা মিলছিল না। পাইপ অপসারণের পাশাপাশি চলছিল যন্ত্র বের করার কাজ। একটি টিলার ঢাল থেকে একটি যন্ত্র মাটি খুঁড়ে বের করার পর বিভিন্ন বসতবাড়ির আঙিনা ও পেছনে তল্লাশি করে ২২টি যন্ত্র পাওয়া যায়। সেগুলো আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।

দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত একনাগাড়ে আড়াই ঘণ্টা চলে অভিযান। ইউএনওর সঙ্গে অভিযানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যসহ কোম্পানীগঞ্জ থানা–পুলিশের একটি দল ছিল।

উৎমা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। চারটি মৌজায় ৩০৫ দশমিক ৮৯ একরজুড়ে পাথর কোয়ারি চিহ্নিত এলাকা ছাড়া উৎমার বিভিন্ন বসতবাড়ি এলাকায় যন্ত্র দিয়ে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে পাথর তোলা হয়। অভিযান শেষে ইউএনও জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারি এলাকা ছাড়া অন্য এলাকা থেকে পাথর তোলা নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, এ জন্য পাথর কোয়ারির স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হবে।

‘বোমা মেশিন’ পাওয়ার পাম্প দিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা একটি যন্ত্র। পাইপ দিয়ে মাটির অন্তত ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর থেকে পানির সঙ্গে পাথর তোলা হয়। যন্ত্র চলার সময় প্রচণ্ড শব্দ হওয়ায় এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বোমা মেশিন’। সিলেটের পাথর কোয়ারিতে ২০০৮ সাল থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়। এই যন্ত্র চালালে ভূগর্ভস্থ মাটির স্তর পরিবর্তন হয়ে ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকায় এ যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যন্ত্রটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সেই সময় থেকে সিলেটের পাথর কোয়ারিতে এই যন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কম সময়ে ও শ্রমিক ছাড়াই পাথর তোলা যায় বলে এক শ্রেণির পাথর কারবারিরা এই যন্ত্র ব্যবহার করছেন।