এটিএম বুথের টাকা চুরির তিন ঘটনায় একই চক্র

পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার তিনটি এটিএম বুথ থেকে ৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় একই চক্র জড়িত। এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, ভিডিও ফুটেজে দুজনকে দেখা গেলেও আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।

এ ঘটনার পর নগরের ব্যাংকের বুথগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্ক রয়েছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।

তবে চার দিন পার হলেও জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা যায়নি। ইতিমধে৵ জড়িতদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামের চকবাজার ও ডবলমুরিং থানা এবং কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় গত বুধবার রাতে পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি চুরির
মামলা করেছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ওই তিনটি চুরির ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। এদের সম্পর্কে কারও কাছে তথ্য থাকলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

১৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টায় কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে পূবালী ব্যাংকের বুথ থেকে এক ব্যক্তি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা অভিনব কায়দায় তুলে নেন। এ ঘটনায় গত বুধবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন পূবালী ব্যাংক কুমিল্লার প্রধান শাখার এজিএম মইনুল ইসলাম। ওই থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। তাঁদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

>

চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় পূবালী ব্যাংকের তিনটি এটিএম বুথ থেকে ৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় পৃথক তিন মামলা। শনাক্ত হয়নি জড়িতরা।

পূবালী ব্যাংকের এটিএম বুথ খুলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দুই ব্যক্তি। ছবি: সিসি ক্যামেরা থেকে

পরদিন ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে সংলগ্ন চট্টগ্রাম কলেজ শাখার বুথ থেকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা তুলে নেয় চেক শার্ট পরা এক ব্যক্তি। এই ঘটনায় মামলা করেন ব্যাংকের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার ব্যবস্থাপক মিনহাজ উদ্দিন। আর আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডের বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন ওই শাখার ব্যবস্থাপক সাহেদ আলী। এতে বলা হয়, ১৭ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে ওই বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। সেখানে একজনের পর আরেকজন ঢুকেছিল।

আগ্রাবাদে এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, প্রথমে এক ব্যক্তি এটিএম বুথে ঢুকেই চাবি জাতীয় কিছু দিয়ে টেলার মেশিনের ওপরের অংশ খুলে তার মধে৵ কিছু একটা প্রবেশ করান। এরপর রিমোট কন্ট্রোল জাতীয় যন্ত্র হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ সময় বেশ কয়েকটি কার্ড ঢুকিয়ে ওই যন্ত্রের সহায়তায় টাকা তুলে নেন। ওই ব্যক্তির পরনে লাল ও কালো রঙের চেক শার্ট ছিল। এরপর আকাশি রঙের শার্ট পরা আরেক ব্যক্তি বুথে ঢোকেন। তিনিও আগের জনের মতো একই প্রক্রিয়ায় টাকা তুলে নেন।

১৮ নভেম্বর বিকেলে আগ্রাবাদ শাখার দুই কর্মকর্তা বুথে টাকা রাখতে গেলে গরমিল দেখতে পান। বুথে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা থাকার কথা থাকলেও ওই বুথে তাঁরা পান ৫০ হাজার টাকা। বিষয়টি ওই দুই কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপককে জানান।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় কুমিল্লা থেকে টাকা তোলার পরদিন তাঁরা চট্টগ্রামে চলে আসেন। কুমিল্লায় চেক শার্ট পরা ব্যক্তি চট্টগ্রামের চকবাজারের বুথ থেকে টাকা তোলেন। আর আগ্রাবাদের বুথে চেক শার্ট পরা ওই ব্যক্তিসহ চশমা পরা আরেক ব্যক্তি ঢোকেন। একই চক্র একই কাজ করেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

আগের কয়েকটি ঘটনা

এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথ থেকেই কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছিল। ওই ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ গত জুনে ঢাকায় এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তাঁরা পুলিশকে জানান, বুথ থেকে টাকা তোলার সময় মুঠোফোনের আন্তর্জাতিক রোমিং সিম ব্যবহার করতেন তাঁরা। এ ছাড়া তাঁদের কাছ থেকে মুখোশ, টুপি, সানগ্লাস, ছয়টি মুঠোফোন এবং একটি আইপ্যাড জব্দ করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে চুরির ঘটনায় জড়িতরা মুখোশ ব্যবহার করেননি।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরি হওয়া টাকাগুলো কোনো গ্রাহকের না। চোরচক্র আমাদের সফটওয়ারে ঢুকতে পারেনি। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। পুলিশ কাজ করছে।’