এক বছরেও মেলেনি লাশ দুটির পরিচয়

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

এক বছর আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর ছিন্নভিন্ন দুই ‘জঙ্গির’ পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র, গ্রেনেড ও বোমার উৎস খুঁজে পায়নি পুলিশ। এমনকি নিহত দুজন কোন জঙ্গি সংগঠনের তদন্তে উঠে আসেনি। এই অবস্থায় র‍্যাবের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গত রোববার আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে বলা হয়, মামলাটির তদন্ত দীর্ঘায়িত করা শ্রম ও সময়ের অপচয়। কোনো ফল আসবে না। ভবিষ্যতে কিছু পাওয়া গেলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হবে।

গত বছরের ৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত উপজেলার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে একটি একে ২২ রাইফেল, তিনটি পিস্তল, পাঁচটি গ্রেনেড ও শক্তিশালী চারটি বোমা আইআইডি (ইম্প্রভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণের পর পাওয়া যায় দুটি ছিন্নভিন্ন লাশ। দুজনেই পুরুষ। বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হতে পারে। পরে বাড়িটির সামনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, অস্ত্রগুলোর সঙ্গে গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে। চট্টগ্রাম আদালত ভবনে হামলার পরিকল্পনা করতে জেএমবির সক্রিয় সদস্যরা বাড়িটিতে অবস্থান করেছিলেন। এই ঘটনায় র‍্যাবের ফেনী ক্যাম্পের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করা হয়। লাশ দুটি স্বজন দাবি করে কেউ না আসায় পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা নগরের চৈতন্য গলি কবরস্থানে লাশ দুটি দাফন করে।

>

মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানা
র‍্যাবের অভিযানে উদ্ধার অস্ত্র, গ্রেনেড, বোমার উৎসও খুঁজে পায়নি পুলিশ
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করে জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। এক বছর তদন্ত করে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া বিস্ফোরণে নিহত দুজনের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারে পাঠানো হলেও নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। দুজনের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হলেও স্বজন দাবি করে কেউ আসেনি। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় নিহত দুজনের ছবি পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকজনকে ছবিগুলো দেখিয়ে পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। তদন্তে নিহত দুজন কোন জঙ্গি সংগঠনের তাও জানা যায়নি। ঘটনার আগে বোরকা পরা এক নারী ওই বাসা থেকে বের হতে দেখা গেলেও তাকে শনাক্ত করা যায়নি।

আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এগুলো হলো নারী সদস্যের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটিত না হওয়া, নিহত দুজনের পরিচয় না পাওয়া এবং নিহত ব্যক্তিরা কোন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সুনির্দিষ্ট তথ্য র‍্যাব দিতে না পারা। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা অস্ত্রগুলো ঘটনাস্থলে বিস্ফোরিত হয়েছিল কি না ব্যালিস্টিক বিশারদের সুনির্দিষ্ট মতামত না দেওয়া। মামলাটির তদন্তে দীর্ঘায়িত শ্রম ও সময়ের অপচয়ে ফল আসবে না তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে নিহত দুজনের পরিচয় ও তাঁরা কোন জঙ্গি সংগঠনের তা বের করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কারও জড়িত থাকার তথ্য পেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে।