সিলেটে তরুণী ধর্ষণ

এক ছাত্রলীগ নেতার ফোন ট্র্যাক করে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার

ধর্ষণের ঘটনার ৩৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এর পরের ১৬ ঘণ্টায় একে একে পাকড়াও হন চার আসামি। এর পেছনে 'ফোনকল ম্যাজিক' কাজ করেছে বলে পুলিশের ভাষ্য।

প্রথম সারিতে বাঁ থেকে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ও শাহ মাহবুবুর রহমান দ্বিতীয় সারিতে বাঁ থেকে অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লা-পাত্তা ছিলেন মামলায় নাম উল্লেখ করা ছয়জন আসামি। পরবর্তী ১৬ ঘণ্টায় ছয়জনের মধ্যে ধরা পড়েন প্রধান আসামি সাইফুর রহমানসহ চারজন। এই ১৬ ঘণ্টায় এমন কী হলো যাতে ধরা পড়লেন চার আসামি—সে প্রশ্ন মানুষের মনে। উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযান-সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এই সাফল্যের পেছনে আছে 'ফোনকল ম্যাজিক'। বিষয়টি খোলাসা করতে তিনি বলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে চার আসামির অবস্থান শনাক্ত হয়। এরপর সমন্বিত অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, এজাহারভুক্ত আরও দুই আসামি ও অজ্ঞাত তিনজনকে গ্রেপ্তারে সক্রিয় রয়েছে পুলিশ, গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল।

'ফোনকল ম্যাজিক' সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাতেই জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকালে এ ঘটনায় মামলা হয়। শনিবার সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা—এই তিন ঘণ্টায় এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোন নম্বরে অসংখ্যবার কল আসে। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ তাঁর মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হলে একে একে ধরা পড়েন এজাহারভুক্ত চারজন আসামি।

সবার শেষে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসামি রবিউল হাসানকে (২৮)। রাতে তাঁকে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার সময় হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা, গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগের সমন্বিত অভিযানে রবিউলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রাত নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে শনাক্ত করা স্থান থেকে রবিউল গ্রেপ্তার হন। রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়েছিলেন তিনি উল্টো পথে, অর্থাৎ ঢাকার পথে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি।
হবিগঞ্জে রবিউলকে ধরার প্রায় আধা ঘণ্টা আগে র‍্যাব-৯ আরেক অভিযানে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার এএসপি ওবাইন রাখাইন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের অভিযান অব্যাহত আছে।

শাহ মো. মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামে। এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পলাতক আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করে। অর্জুনকে গ্রেপ্তার করার আগে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেপ্তার হন প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। খেয়াঘাট থেকে দোয়ারাবাজার যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার হন তিনি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ছয় আসামির মধ্যে মূলহোতাসহ চারজন ধরা পড়েছেন। বাকি দুই আসামি তারেকুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানকে ধরতে অভিযান চলছে।