অপহরণের দুই সপ্তাহ পরও নাটোরের লালপুর উপজেলার ইটভাটার শ্রমিক সরদার আবুল কালাম আজাদকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন ওরফে নান্নুসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজন অপহরণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শ্রমিক সরদারের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আবুল কালাম আজাদকে অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
অন্য একটি পক্ষ বলছে, ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে শ্রমিক সরবরাহ না করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালিকের সঙ্গে শ্রমিক সরদারের বিরোধ চলছিল।
মামলার এজাহার ও আবুল কালাম আজাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোরদহ গ্রামের আবুল কালাম আজাদ রামকৃষ্ণপুর গ্রামের এনইএল নামের ইটভাটায় শ্রমিক সরদার হিসেবে কাজ করতেন। ২০ এপ্রিল বেলা দুইটার দিকে তিনি তাঁর বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বেরিলাবাড়ি তিনখুঁটি এলাকায় পৌঁছালে এনইএল ইটভাটার দুই মালিক ফরহাদ হোসেন, মো. লেলিনসহ ১০ থেকে ১২ জন তাঁকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে ইটভাটায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁরা সরদারের স্ত্রী শরিফা বেগম ও ভাই রাকিবুল ইসলামের মুঠোফোনে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ না দিলে হত্যারও হুমকি দেওয়া হয়। শরিফা বেগম ও রাকিবুল ইসলাম ওই ইটভাটায় গিয়ে আবুল কালামের খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁকে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্বামীকে না পেয়ে গত ২৫ এপ্রিল শরিফা বেগম বাদী হয়ে লালপুর থানায় মো. লেলিন (৩৭), ফরহাদ হোসেন (২৮), সহযোগী মো. মামুনসহ (২২) ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদা দাবির মামলা করেন।
মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেন। ফরহাদ হোসেন ও তাঁর দুই সহযোগী মামুন ও পলাশ অপহরণের দায় স্বীকার করে ২৬ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে এখন পর্যন্ত আবুল কালামের সন্ধান পাননি পুলিশ।
শরিফা বেগম স্বামীর জীবিত থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আসামিরা আদালতে অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন। তাহলে পুলিশ কেন তাঁর স্বামীর সন্ধান পাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এদিকে এনইএল ইটভাটার মালিকপক্ষের একজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, আবুল কালাম আজাদ শ্রমিক সরবরাহের জন্য মালিকের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রমিক সরবরাহ করেনি। এটা নিয়ে তাঁর সঙ্গে মালিকপক্ষের দ্বন্দ্ব হয়। একপর্যায়ে ওই সরদার ও আসামি লেলিন নিখোঁজ হন। মুক্তিপণ বা চাঁদা দাবির ঘটনা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, তিন আসামি আবুল কালাম আজাদকে অপহরণের দায় স্বীকার করলেও তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তথ্য দেননি। তাই তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আসামি ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বাঘা থানায় আরও একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি মামলা। মামলার প্রধান আসামি মো. লেলিন এখনো আত্মগোপন করে আছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে শ্রমিক সরদারের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।