ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গতকাল রোববার মধ্যরাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দলীয় কর্মীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের নেতা–কর্মীদের লোহার রড, পাইপ, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল (ছাত্র) এলাকায় কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পরে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টার মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় দুই গ্রুপের ছয় থেকে সাতজন কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন নেতা–কর্মী সাদ্দাম হোসেন হলের ২৩৫ নম্বর কক্ষে যান। তাঁরা ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মী মোশাররফ হোসেনকে দলীয় এক অনুষ্ঠানে না আসার কারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা মোশাররফকে হুমকিধমকি দিলে তিনি তাঁর নেতা–কর্মীদের খবর দেন।
পরে অপর পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী সাদ্দাম হোসেন হলে এলে তাঁদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক রাকিবের গ্রুপের কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মারধরের শিকার হন।
তবে মোশাররফ হোসেনের দাবি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তাঁকে ও শিমুল নামের এক কর্মীকে মারধর করা হয়।
এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের নেতা–কর্মীরা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা–কর্মীরা জিয়া মোড়ে অবস্থান নেন।
এ সময় দুই গ্রুপের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করেন। বিদ্রোহী গ্রুপের ধাওয়া খেয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা–কর্মীরা পালিয়ে আবাসিক হলের ভেতরে অবস্থান নেন।
ঘটনার একপর্যায়ে জিয়া মোড়, লালন শাহ হল ও জিয়া হলের সামনেসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্মণ ও সহকারী প্রক্টর এস এম নাসিমুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক বিষয়ে কথা বলতে তাঁর (মোশাররফ হোসেন) রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা বিষয়টিকে অন্যদিকে মোড় দেয়। এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পাল্টা অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই কর্মী নিজ কক্ষে খাওয়াদাওয়া করছিল। এ সময় সাধারণ সম্পাদক তার নেতা–কর্মীদের নিয়ে বিনা উসকানিতে তাঁকে মারধর করে। পরবর্তী সময়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শোকের মাসে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।’
ঘটনাটি তদন্ত করা হবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছি। এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’