‘আড়াই কোটি টাকা’র সোনার মালিক পাওয়া গেল না

সোনার বার
প্রতীকী ছবি

৯ মাস আগে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের ভেতর থেকে আড়াই কেজি ওজনের ২২টি সোনার বার উদ্ধার করেছিলেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

দুবাইফেরত ওই উড়োজাহাজে এসব সোনা কে বা কারা রেখেছিলেন, সে সময় তা জানা যায়নি। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধানেও ওই সোনার মালিকদের ‘খুঁজে পাওয়া গেল না’। তাই সোনা চোরাচালানের এই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিমানবন্দর থানা-পুলিশ।

সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় সোনা চোরাচালান চক্রের কোনো সদস্য শনাক্ত না হলেও ভবিষ্যতে জড়িতদের শনাক্ত করা গেলে মামলাটি আবার সচল করা হবে।

তবে পুলিশের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন মামলার বাদী কাস্টমসের গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা ওই সব সোনার আনুমানিক মূল্য আড়াই কোটি টাকা।

এত বড় একটি চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের বের করা গেল না। আদালতে যে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো, সে তথ্যও তাঁকে জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ মশিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই সোনা চোরাচালান চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করতে যাত্রী, এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তিনি। কিন্তু ওই সোনার বারগুলো উড়োজাহাজের সিটের নিচে কে বা কারা রেখেছিল, তা বের করা যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

মামলার কাগজপত্র, তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দুবাই থেকে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৪৮ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। উড়োজাহাজে ২৪৮টি আসন থাকলেও সেদিন যাত্রী ছিলেন ২১৭ জন। সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দারা উড়োজাহাজের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে ১৯-এইচ নম্বর আসনের নিচে ‘লাইফ জ্যাকেটের’ ভেতর থেকে বিশেষ কায়দায় রাখা ২২টি সোনার বার জব্দ করেন। এসব সোনার বারের ওজন ছিল ২ কেজি ৫৫২ গ্রাম। এ ঘটনায় কাস্টমস কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মশিউল আলম জানান, যে আসনের নিচ থেকে সোনার বারগুলো উদ্ধার করা হয়, সেই আসনে কোনো যাত্রী ছিলেন না। ওই সোনার বারগুলো কে বা কারা এনেছিলেন, তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি ওই আসনের আশপাশের চার থেকে পাঁচজন যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি।

এই পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ওই ফ্লাইটের সব যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তিনি বলেন, যে কয়েকজন যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁরাও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেননি। তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে বিমানের পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবানবন্দি রেকর্ডের তথ্য আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ। জবানবন্দিতে দেওয়া এই পাঁচজনের বক্তব্য একই রকম। বিমানের টেকনিশিয়ান মুরাদ হোসেনসহ পাঁচজন পুলিশকে জানান, কে বা কারা বিমানের ভেতর সোনা রেখেছিলেন, সেই তথ্য তাঁরা জানেন না।

এঁদের মধ্যে বিমানের টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারা সেদিন বিমানের ভেতর সোনা রেখেছিল, সেটি আমি জানি না।’ বিমানের আরেক টেকনিশিয়ান মুরাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তো বিমানের ভেতরেই ঢুকিনি। এ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।’

তবে মামলার বাদী কাস্টমস কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বিমানের কর্মচারীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ কায়দায় সিটের নিচে যেভাবে সোনার বার রাখা হয়েছিল, একজন সাধারণ যাত্রীর পক্ষে সেভাবে সোনা রাখা সম্ভব নয়। আর পুলিশ যে কাউকে ধরতে পারেনি, সেটি তাঁকে জানানো হয়নি।

মামলায় ওয়াহিদুজ্জামান উল্লেখ করেন, বিমানের পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর বিমানের ভেতরে ঢোকেন ফ্লাইটের কাটারিং সেন্টারের কর্মচারী, বিমানের টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এই সোনার বার বিমানের ভেতর থেকে বাইরে আনার জন্য সংঘবদ্ধ একটি চোরাচালান চক্র জড়িত রয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কায়কোবাদ কাজী প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে যদি সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়, তখন মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে।