আসামি পলাতক, ডিএনএ পরীক্ষা অসম্পূর্ণ

অনেক মামলাতেই শুধু ভুক্তভোগীর ডিএনএ পরীক্ষা হচ্ছে। সক্ষমতা না বাড়িয়ে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার সমস্যা আরও আছে।

ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির এবং আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা হয়, কিন্তু আসামির ডিএনএ নমুনার নাগাল পাওয়া যায় না। ডিএনএ পরীক্ষার ল্যাবরেটরিগুলো বলছে, পুলিশ আসামিদের হাজির করাতে পারে না বলে এভাবে অনেক ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রেই পরীক্ষাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

দেশে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষার জন্য কেবল দুটি ল্যাবরেটরি রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ ল্যাব এযাবৎ আসা ধর্ষণ মামলার নমুনার প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামিদের না পাওয়ার হিসাব দিচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএনএ ল্যাবের হিসাবে এই হার আরও বেশি—প্রায় ৫০ শতাংশ।

ডিএনএ হচ্ছে একজন ব্যক্তির বংশগতির মৌলিক উপাদান। দুজন মানুষের ডিএনএ প্রোফাইল কখনো এক হয় না। এমনকি কিছু গবেষণা বলছে, হুবহু যমজদেরও ডিএনএ প্রোফাইল হুবহু এক হয় না।

ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সাহায্যে ন্যূনতম জৈবিক নমুনা থেকেও কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং অপরাধস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়। তারপর সেগুলোর তুলনা করে মিল বা অমিল খুঁজে বের করা হয়।

জৈবিক নমুনা অর্থাৎ রক্ত, লালা, বীর্য, চুল, মাংসপেশি, হাড় ইত্যাদি ডিএনএর গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে আলামত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা খুব জরুরি।

সম্প্রতি সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধন করেছে। সংশোধিত আইনে ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কিন্তু আসামির ডিএনএ না পাওয়া গেলে কী হবে? প্রশ্নটির উত্তর এখনো অজানা। অন্যদিকে ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে সম্মতির প্রশ্নটিও বড় হয়ে আসছে।

দুজন মানুষের ডিএনএ প্রোফাইল কখনো এক হয় না। এমনকি কিছু গবেষণা বলছে, হুবহু যমজদেরও ডিএনএ প্রোফাইল হুবহু এক হয় না।
ডিএনএ হচ্ছে একজন ব্যক্তির বংশগতির মৌলিক উপাদান

কারণ ‘আসামি পলাতক’

নানাবাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিল ১৫ বছরের মেয়েটি। পথে পূর্বপরিচিত এক তরুণ ও তাঁর দুই বন্ধু মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ঘটনার রাতেই মামলা হয়। পুলিশ আলামত হিসেবে মেয়েটির পোশাক জব্দ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠায়।

পুলিশ সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে পূর্বপরিচিত রফিককে (২২) গ্রেপ্তার করে। পুলিশ বলছে, করোনা–বিরতির সময় জেলা আদালত থেকে জামিন পান রফিক। বাকি দুজন আসামি শুরু থেকেই পলাতক।

ধর্ষণের আলামতের ডিএনএ জমা রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএ ডেটা ব্যাংকে। কিন্তু যে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, পুলিশ তাঁকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠায়নি।

মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, জামিন পাওয়ার পর আসামির কোনো খোঁজ এখন পুলিশ জানে না। তাঁকে হাজির করতে আদালত তাঁর আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তখন পরীক্ষার জন্য তাঁকে পাঠানো যাবে। আর পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বরিশালের কোতোয়ালি থানায় গত বছরের মে মাসে চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীকে ধর্ষণের মামলা হয়। মামলাটির দুই আসামি ধরা পড়েননি। ওই নারীর ডিএনএ সিআইডিতে জমা রয়েছে।

থানার ওসি নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা একই বস্তির বাসিন্দা ছিলেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সিআইডির অধীন ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন হিসাব–নিকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসা ধর্ষণ মামলায় প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামিকে পাওয়া যায় না। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে আসামি পলাতক থাকা, অপরাধ স্বীকার করে ফেলা, আসামির সঙ্গে বাদীর মীমাংসা হয়ে যাওয়া।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বললেন, ডিএনএ ব্যাংকে এখন ৩০ হাজারের বেশি ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ করা আছে। সন্দেহভাজন যে ব্যক্তিদের ডিএনএ মেলানোর জন্য এখনো পাওয়া যায়নি, তাঁদের যখন পাওয়া যাবে তখনই মিলিয়ে দেখা হবে।

সিআইডির ল্যাবটি হয় ২০১৪ সালে। ডিএনএ পরীক্ষার অন্য ল্যাবটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি। ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালে এটি চালু করে।

ন্যাশনাল ফরেনসিক ল্যাবের জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক শরীফ আখতারুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যৌন সহিংসতার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির ডিএনএ না পেলে এই পরীক্ষা করে কোনো ফল হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই, সন্দেহভাজনের নমুনা নেই। তখন শুধু ভুক্তভোগীর বা ধর্ষণের আলামতের ডিএনএ করে রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি অসম্পূর্ণই রয়ে যায়।

অধ্যাপক শরীফ কাগজপত্র ঘেঁটে বলেন, এই ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসামিদের না পাওয়ার হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসা ধর্ষণ মামলায় প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে আসামিকে পাওয়া যায় না।
নুসরাত ইয়াসমিন, সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট, ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশ
সংশোধিত আইনে ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে

দুই-তৃতীয়াংশই ধর্ষণের মামলা

বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং নিজস্ব সূত্রে নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্য সংকলিত করে। সংগঠনের হিসাব অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন।

সিআইডির ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ২ হাজার মামলা এসেছে। এর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ছিল ধর্ষণ মামলা। একই সময়ে ন্যাশনাল ফরেনসিক ল্যাব সাড়ে পাঁচ শর মতো মামলার নমুনা পেয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলা ৩৫৩টি। এগুলোরও প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ ধর্ষণ মামলা।

ন্যাশনাল ল্যাব বলছে, হত্যা, ধর্ষণসহ অপরাধের ঘটনা ছাড়াও বিদেশে অধিবাসী হতে ইচ্ছুক, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব প্রমাণ, অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির পরিচয় বের করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।

ল্যাবটি পরিচালিত হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, এই ল্যাবে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজারের মতো নমুনার ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে এসব নমুনা পরীক্ষা হয় ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাতটি ল্যাবে। আদালত থেকে পাঠানো মামলার যে নমুনাগুলোয় ডিএনএ পাওয়া যায়, সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র-এর হিসাব অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন।
ধর্ষণ

ডিএনএতে লেখা মামলার ভাগ্য

অনেক ক্ষেত্রেই ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ধর্ষণ মামলার বিচারের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। বছর পাঁচেক আগে সাতক্ষীরায় ৩০ বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী নারী সন্তানের জন্ম দিলে অভিযোগ ওঠে, এক প্রতিবেশী তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। পিতৃপরিচয় নির্ধারণে ২০১৮ সালে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল পজিটিভ আসে, অর্থাৎ শিশুর নমুনার সঙ্গে আসামির নমুনা মিলে যায়। মামলাটি এখনো চলছে।

বছর দুই আগে গাইবান্ধায় ১১ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। সে বলে, দূরসম্পর্কের এক নানা তাকে ধর্ষণ করেছেন। মেয়েটির সন্তান জন্ম নেওয়ার পর শিশুর ও অভিযুক্ত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। প্রতিবেদন নেগেটিভ আসে, অর্থাৎ দুটি নমুনার মিল পাওয়া যায়নি। কিছুদিন পর সন্দেহভাজন ব্যক্তি মারা যান। এ মামলার আর কোনো অগ্রগতি নেই।

বরিশাল বিভাগের আরেক শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণীর (১৯) ধর্ষণ মামলাতেও সন্দেহভাজন আসামির সঙ্গে ধর্ষণের আলামতের ডিএনএ মেলেনি। মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

যশোরে ধর্ষণের ফলে ১১ বছরের একটি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, ৫৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর ৯ দিনের সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষায় ওই ব্যক্তি পিতা হিসেবে শনাক্ত হন। মেয়েটির পরিবার বলছে, আসামিপক্ষ টাকাপয়সা দিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করছে।

ওপরে উল্লেখ করা চারটি মামলা পরিচালনা করছে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরিষদের লিগ্যাল এইড ইউনিটের পরিচালক আইনজীবী মাকছুদা আখতার বলেন, যেসব উন্নত দেশে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রভাবিত হয় না, সেখানে ডিএনএ পরীক্ষা আধুনিক একটি পদ্ধতি। তখন এ পরীক্ষার মাধ্যমে মামলার বিচারে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

মাকছুদা আখতার বলেন, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সততা-দক্ষতা থাকা খুব জরুরি। দুর্নীতি বা অদক্ষতার কারণে প্রতিবেদন ভুল হলে একজন ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন।

ল্যাব দুটির তথ্য অনুযায়ী, রক্তকণিকা থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ সাত দিন এবং হাড় থেকে সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগে। কিন্তু আদতে প্রতিবেদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

গত সপ্তাহে ন্যাশনাল ল্যাবে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় তুরাগ থানা থেকে আসা পুলিশের এক সহকারী পরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে। তিনি গত এপ্রিলে ঘটা এক ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ডিএনএ প্রতিবেদন নিতে এসেছিলেন। বললেন, ‘ছয়-সাত মাসের আগে প্রতিবেদন পাওয়াই যায় না।’

ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সততা-দক্ষতা থাকা খুব জরুরি।
মাকছুদা আখতার, লিগ্যাল এইড ইউনিটের পরিচালক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

বাধ্যতামূলক পরীক্ষা দুর্ভোগ বাড়াবে

ডিএনএ ল্যাব দুটির অভিজ্ঞতা বলছে, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ল্যাবগুলোর সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে হবে।

এদিকে সরকার ধর্ষণ মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রাখতে চায়, সক্ষমতা না-ও যদি থাকে। প্রথম আলোকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এরপরও এটা রাখতে হবে। বরং টু-ফিঙ্গার টেস্ট তুলে দেব। পরীক্ষায় সক্ষমতা বাড়াতে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করব।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) ফরিদা ইয়াসমিনের মতে, ধর্ষণের মামলায় আগেও ডিএনএ পরীক্ষা অনেক করা হতো। এখনো চারপাশের সাক্ষ্যপ্রমাণ, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষার ওপর পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারবে। আসামিকে পাওয়া গেলে তখন তার ডিএনএ পরীক্ষা করে মেলানো যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক অবশ্য আগে সক্ষমতা না বাড়িয়ে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আপাতত দুটি ল্যাবই ভরসা। আর ধর্ষণের মামলায় সারা দেশ থেকে আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করার মতো সক্ষমতা সেগুলোর নেই।

শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে আরও বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম, সুযোগ–সুবিধা এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর ব্যবস্থা না করে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার ফলে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া সহজতর হবে।

এই আইনজীবীর মতে, তাড়াহুড়ো করে কয়েক দিনের মধ্যে আইন প্রণয়ন করলে অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রচুর ভুলত্রুটি থেকে যাবে। যার সুযোগ নেবে আসামিরা। ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকতে পারে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সর্বশেষ এই সংশোধনীতে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী ব্যক্তির সম্মতি না থাকলেও ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক তাসলিমা ইয়াসমীন মনে করছেন, আসামির ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া না গেলে কোনো লাভই হবে না। অন্যদিকে ভুক্তভোগীর একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য প্রোফাইলে রয়ে যাবে। এর ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুযোগ হারিয়ে ভুক্তভোগী আরও হেনস্তার শিকার হতে পারেন।