টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় ছয় বছর ধরে পলাতক সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খানের তিন ভাই। তাঁদের একজন টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তিকে প্রকাশ্যেও দেখা গেছে। সর্বশেষ গত সোমবার তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে টাঙ্গাইলে আসেন। আবার নির্বিঘ্নে চলেও যান। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, সহিদুর রহমান খান আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে হঠাৎ করেই আদালতে এসেছিলেন। খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ যায়। কিন্তু পুলিশ পৌঁছার আগেই তিনি চলে যান।
হত্যা মামলার আসামির আদালতে এসে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার পলাতক আসামি আদালতে এলেন। পরে আবার নির্বিঘ্নে চলে গেলেন, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘আতাউর রহমান খান একজন সাংসদ হয়ে খুনি ছেলেকে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সংসদ সদস্য পদের অবমাননা করেছেন।’
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
আতাউর রহমান খান একজন সাংসদ হয়ে খুনি ছেলেকে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সংসদ সদস্য পদের অবমাননা করেছেননাহার আহমেদ, ফারুক আহমেদের স্ত্রী
পুলিশ সূত্র জানায়, ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে পুলিশ আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর ছোট ভাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এক সপ্তাহ পর পুলিশ মোহাম্মদ আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে আমানুরের অপর দুই ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান যুক্ত বলে জানা যায়। এরপর জাহিদুর ও সানিয়াত গা ঢাকা দেন। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আমানুর ও সহিদুর আত্মগোপনে চলে যান। ২২ মাস পলাতক থাকার পর আমানুর আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন আদালত। প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাহিদুর ও সানিয়াত ২০১৪ সালে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু সহিদুর অবস্থান করছেন ঢাকায়। বছরখানেক গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও পরে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। ঢাকায় অবস্থান করে টাঙ্গাইলে তাঁদের অনুসারী কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। টাঙ্গাইল থেকে কর্মী–সমর্থকেরা ঢাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সেই ছবি ফেসবুকেও দেখা গেছে। সহিদুর টাঙ্গাইল এসে গোপনে অনুসারীদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিদুর টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত বাবা আতাউর রহমান খানের পক্ষে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে অংশ নেন। সেই সংবাদ প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে সহিদুর আবার সক্রিয় হয়েছেন। তাঁর অনুসারীরা টাঙ্গাইলে তৎপরতা শুরু করেছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলেও তাঁর সমর্থকেরা জানিয়েছেন।
গত সোমবার সহিদুর তাঁর বাবা সাংসদ আতাউর রহমান খানকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হন। আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, অসুস্থতার কারণে বিচারক সিকান্দার জুলকান নাইম আদালতে আসবেন না জানার পর সহিদুর আদালত ত্যাগ করেন।