আর কখনো চোখে দেখবে না মিলন?

কিশোর মিলন হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
কিশোর মিলন হোসেন।  ছবি: সংগৃহীত

কাজ করেছে, তার জন্য মজুরি চেয়েছে। অপরাধ (!) বলতে এতটুকুই মিলন হোসেনের (১৬)। তার চোখে টেস্টার দিয়ে আঘাত করেন চাচাতো ভাই। ডান চোখটা একেবারে নষ্টই হয়ে গেছে। বাঁ চোখটাও নষ্ট হওয়ার পথে।

কিশোর মিলনের ডাকনাম বিল্লাল। বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের রাজাবাড়ি বানিয়াচালা গ্রামে। গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ও জাহানারা বেগম দম্পতির ছেলে সে। গত ১২ এপ্রিল থেকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে মিলনের।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মিলনের বাবা গিয়াস কারখানা শ্রমিক। একমাত্র ছেলে মিলন কিছুদিন আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তার ছোট চাচা মজিবর রহমানের ছেলে মামুন (২৫) ডিশ সংযোগের কাজ করেন। তাঁর কাজে সহযোগিতা করত মিলন। তবে কাজের জন্য তাকে কোনো মজুরি দেওয়া হতো না। ঘটনার দিন গত ১২ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার দিকে মামুন ফোন করে কাজের জন্য মিলনকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মামুন ফোন করেন মিলনের বাবা মজিবর রহমানকে। বলেন, মিলন কাজ করার সময় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে আহত হয়েছে। তাকে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মিলনের পরিবারের সদস্যরা ছুটে যান ওই হাসপাতালে। গিয়ে দেখেন তার অবস্থা খুবই খারাপ। পুরোপুরি অচেতন অবস্থায় আছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মিলনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ফরিদুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, মিলনের চোখ ঠিক করতে তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তার ডান চোখ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাঁ চোখও নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে। মুখে ছাড়া শরীরের আর কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।

এদিকে ঢাকা মেডিকেলে টানা চিকিৎসা চললেও মিলন কথা বলতে পারছিল না। সেখানে ১৯ দিন চিকিৎসার পর ১ মে মিলনের জ্ঞান ফেরে। এরপরই জানা যায় নেপথ্যের ঘটনা—মিলন আসলে পড়ে আহত হয়নি, তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।

মিলন জানায়, ঘটনার দিন তাদের সঙ্গে ছিলেন পাশের বাড়ির আলামিনও (১৯)। তিনজন মিলে পাশের গোড়াই গ্রামে ডিশ সংযোগের কাজ করতে যান। একপর্যায়ে মামুনের কাছে কাজের মজুরি দাবি করেন মিলন। এতে ক্ষিপ্ত হন তিনি। একপর্যায়ে পাশের একটি তিনতলা ভবনের ছাদে যান তাঁরা। সেখানে মামুন ও মিলনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। তখন বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত টেস্টার দিয়ে মিলনের ডান চোখে সজোরে আঘাত করেন মামুন। আঘাতের চোটে নিস্তেজ হয়ে পড়ে মিলন। পরে তার বাঁ চোখেও আঘাত করা হয়।

এ ঘটনায় মিলনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে ৯ মে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়েছে আলামিন ও মামুনসহ তিনজনকে। মিলনের বড় বোন নাছরিন বেগম বলেন, মির্জাপুরে গ্রামের বাড়িতে তাঁর মা জাহানারা ছোট বোনকে নিয়ে থাকছেন। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

আদালতে মামলা করার বিষয়ে মিলনের পরিবার বলছে, তারা মামলা করতে থানায় গিয়েছিল। কিন্তু এলাকায় রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। এ কারণে মামলা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

তবে মির্জাপুর থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক গত বৃহস্পতিবার বলেন, মিলনের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় আসেনি। তারপরও পুলিশ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।