এটিএম বুথে জালিয়াতির নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি জালিয়াত চক্র আরও পাঁচটি এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করেছিল। বুথগুলো সবই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। চুরির ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের পর পুলিশ ধারণা করছে, এ ঘটনায় ১২-১৫ জন ইউক্রেনের নাগরিক জড়িত। এসব বুথ থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১২ লাখ টাকা চুরি হওয়ার খবর তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এর আগে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা ও তালতলার এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথ থেকে টাকা চুরির তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে মধ্য বাড্ডার দুটি বুথ থেকে ৪ লাখ টাকা চুরি হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ছাড়া আরও অন্তত তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা চুরি করেছে জালিয়াত চক্র। তবে অন্য ব্যাংকগুলো বিষয়টি স্বীকার করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকেও অন্য ব্যাংকগুলো এ নিয়ে কিছু জানায়নি।
পুলিশ সূত্র জানায়, তদন্তে নতুন যে পাঁচটি এটিএম বুথের সন্ধান পাওয়া গেছে, সেগুলো রাজধানীর র্যাডিসন হোটেল, কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি সড়ক ও নিকুঞ্জ এলাকার। গত ৩১ মে প্রথমে মধ্য বাড্ডার বুথ থেকে টাকা চুরি হয়। বাকি সব বুথে চুরি হয় ১ জুন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির খবর পাওয়া গেছে।
বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) যৌথভাবে তদন্ত করছে।
ডিবির পূর্ব বিভাগের খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা চুরির ঘটনায় জালিয়াত চক্রের দুটি গ্রুপ জড়িত ছিল বলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানতে পেরেছেন। জালিয়াতিটি পুরোপুরি প্রযুক্তির সহায়তায় হওয়ায় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের গ্রেপ্তার ছয় নাগরিককে রিমান্ডে এনে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। পারিপার্শ্বিক তথ্য সংগ্রহের পর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
১ জুন সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ডাচ্-বাংলার এটিএম বুথে ইউক্রেনের দুই নাগরিক টাকা চুরি করতে যান। তাঁদের একজন ধরা পড়লেও পালিয়ে যান আরেকজন। ওই দিন রাতেই রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে ইউক্রেনের আরও পাঁচ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই চক্রের একজন এখনো পলাতক।
>নতুন পাঁচ বুথের সবগুলোই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের
পাঁচ বুথ থেকে ১ জুন টাকা চুরি হয় বলে পুলিশ জানায়
গত ৩১ মে প্রথমে মধ্য বাড্ডার বুথ থেকে টাকা চুরি হয়
এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির খবর পাওয়া গেছে
দেশে আসা ইউক্রেনের নাগরিকের তথ্য চেয়েছে পুলিশ
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩০ মে বিকেলে তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসেন সাত নাগরিক। পরদিনই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মধ্য বাড্ডার দুটি বুথ থেকে ৪ লাখ টাকা চুরি করেন। ৬ জুন তাঁদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। এই সাতজন ছাড়াও জালিয়াত চক্রে আর কারা আছে, তা শনাক্ত করতে ১৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা এবং বেরিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের সব নাগরিকের তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চাওয়া হয়েছে।
ডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে থাকা বাংলাদেশি একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তাঁদের জানিয়েছেন বুথ থেকে এভাবে টাকা চুরির ঘটনা বাইরের দেশে আগেও ঘটেছে। সেসব ক্ষেত্রে জালিয়াত চক্র ‘টুপকিন’ নামে একটি ম্যালওয়ার ব্যবহার করে বুথের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। টাকা উত্তোলনের সময় ব্যাংকের কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে যে নির্দেশনা আসার কথা, সেটি তখন চক্রের সদস্যরাই দিয়ে থাকেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলছেন, জালিয়াত চক্রের এই সদস্যরা ‘হিডেন কুবরা’ নামক একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘লেজারাস’ নামের যে চক্রটি জড়িত ছিল সেই চক্রের সঙ্গে এদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের এটিএম বুথগুলোতে জালিয়াত চক্র হানা দিতে পারে, এমন তথ্য তাঁরা আন্তর্জাতিক একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আগেই জানতে পেরেছিলেন। সেই তথ্য তাঁরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন।
এটিএম বুথে টাকা চুরির ঘটনায় শিগগিরই সব ব্যাংককে নিয়ে সভা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাচ্-বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক থেকে টাকা চুরির খবর আমরা জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনকে পাওয়া যায়নি।