চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে ৫০ হাজার করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
প্রায় দুই দশক আগে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরীর বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে। এই মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এক আসামির আপিল ও দুই আসামির জেল আপিলের ওপর ৬ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা সংশোধন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিন আসামি হলেন, আলমগীর কবির, তসলিম উদ্দিন মন্টু ও মো. আজম।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায়, ‘আলমগীর কবির বনাম রাষ্ট্র’ শিরোনামে তিন আসামির আপিল বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
সকালে ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে আদালত বলেন, সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জরিমানা আরোপ করা হয়নি। ওই সাজার (আমৃত্যু কারাদণ্ড) পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে তাদের আর এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
আদালতে আলমগীরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। দুই আসামির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত তিন আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছেন। এই অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের অতিরিক্ত আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।’
২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর অধ্যক্ষ মুহুরীকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী উমা মুহুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন। অপর চারজন খালাস দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খান (পলাতক)।
ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আসামি ও বাদীপক্ষের আপিলের শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। তাঁরা হলেন আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। এর আগে ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গিট্টু নাছির র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি সাইফুল ও শাহজাহান হাইকোর্টে খালাস পান। এর আগে ২০০৪ সালের জুনে নিজের বাসায় সাইফুল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
তবে পলাতক যাবজ্জীবন দণ্ডিত মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন ও হাবিব খানের আপিল বা আবেদনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে বাইট্ট্যা আলমগীর আপিল বিভাগে ২০০৮ সালে আপিল করেন। অপর দুজন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন। এসব আপিল খারিজ করে ৬ অক্টোবর রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।