বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। মামলার বাদী আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ অসুস্থ হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর টানা শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
‘শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। জন্ডিসে ভুগছি। আদালত আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি কেমন আছি। আদালতকে আমি জানিয়েছি আমার অসুস্থতার কথা। আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’বরকত উল্লাহ, আবরারের বাবা
রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথম আলোকে বলেন, আজ রোববার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুনানির দিন ছিল। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে এসেছিলেন বাদী আবরারের বাবা। তিনি অসুস্থ হওয়ায় আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির নতুন দিন ঠিক করেছেন।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি অসুস্থ। জন্ডিসে ভুগছি। আদালত আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি কেমন আছি। আদালতকে আমি জানিয়েছি আমার অসুস্থতার কথা। আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’
এর আগে মামলার ২৫ আসামির মধ্যে ২২ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই মামলার ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার ২৫ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন ২২ জন, পলাতক আছেন তিন আসামি।
গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গত ২১ জানুয়ারি আমলে নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। আবরার থাকতেন শেরেবাংলা হলে ১০১১ নম্বর কক্ষে। এটি হলের নিচতলায় অবস্থিত। একই কক্ষে থাকতেন ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমানের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। তদন্তে জানা যায়, আবরার হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মিজানুর রহমান। গত ৪ অক্টোবরের আগে যেকোনো সময় মিজানুর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিনকে বলেন, ‘আবরারকে তাঁর শিবির বলে সন্দেহ হয়।’
মিজানুরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেহেদি হাসান ওরফে রবিন এই বিষয়টি শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের নিজস্ব ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানান। ৪ অক্টোবর শেরেবাংলা হলের ক্যানটিনে মেহেদি হাসান ওরফে রবিন এবং ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্নার নেতৃত্বে অমিত সাহা, ইফতি মোশাররফ সকাল, আকাশ হোসেন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মনির, মিফতাহুল ইসলাম জীয়নসহ অন্য আসামিরা মিটিং করেন। এ সময় আবরার তাঁর কক্ষে আছেন কিনা তা জানতে একাধিক সহযোগীকে পাঠিয়ে খোঁজ নেন। কিন্তু আবরার সেদিন তাঁর কক্ষে ছিলেন না। ছিলেন কুষ্টিয়ায়, নিজ বাড়িতে। পরদিন ৫ অক্টোবর মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে আসামি হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, আকাশ হোসেন, মাজেদুর রহমান মাজেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রাসহ সবাই গেস্টরুমে একত্রিত হয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।