>• তিনি বেতন পান সাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা মতো
• অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে
• উত্তরায় তিনি ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি
• আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে
তিনি বেতন পান সাকুল্যে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তিনি ও তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে–বিদেশে আছে বাড়ি–মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এই ব্যক্তির নাম আবজাল হোসেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আবজাল অধিদপ্তরে যে পদে কাজ করেন, তাতে ‘আলাদিনের চেরাগ’ না পেলে এত সম্পদের মালিক হতে পারতেন না। আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। আগামী বৃহস্পতিবার রুবিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার আবজালকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সে অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবজাল দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড়জন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পড়াশোনা করেন। ছোট দুজনের মধ্যে একজন ষষ্ঠ শ্রেণি এবং অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করে গত বছর থেকে দেশেই পড়াশোনা করছে। এই দম্পতির ছয়জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে কর্মরত।
অনুসন্ধান সূত্র বলছে, স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও লাইসেন্স তৈরি করে টেন্ডার-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন আবজাল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের সঙ্গেও আবজালের যোগসাজশের তথ্য মিলেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবজাল হোসেন গত এক বছরে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২৮ বারেরও বেশি সপরিবার সফর করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পর্টার স্ট্রিট মিন্টুতে যে বাড়ি কিনেছেন, তার দাম দুই লাখ ডলারেরও বেশি।
তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবজাল হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দুদক অনুসন্ধান করার পর বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
এদিকে একই ধরনের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (বাজেট) আনিসুর রহমানকে সোমবার দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গতকাল অধিদপ্তরের আরও দুই পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তাঁরা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, দুদকের উচিত দ্রুত এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা। পাশাপাশি বিষয়টির গভীরে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা বের করা। কারণ, এ ধরনের ঘটনা বড় বা প্রভাবশালী কারও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একা করা কঠিন।
আরও পড়ুন: