রাজধানীর বিমানবন্দর থানার কাওলা এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী। তাঁরা হলেন ফাতেমা ইমাম তানিয়া (২৬), আফসানা মিমি (২৩) ও সালমা সুলতানা (২৬)। অন্য দুজন শেখ মোহাম্মদ বাঁধন ওরফে পারভেজ (২৮) ও রুহুল আমিন ওরফে সায়মন (২৯)। আটক ব্যক্তিদের কাছে ইয়াবা ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে মাউন্ট লাভিয়ান এলাকায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ২৭২ কেজি হেরোইন, ৫ কেজি কোকেনসহ মো. জামাল উদ্দিন ও রাফিউল ইসলাম নামক দুই বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হন। গত ১৪ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার একই এলাকা থেকে ৩২ কেজি হেরোইনসহ বাংলাদেশি নাগরিক সূর্যমণি গ্রেপ্তার হন। মাত্র এক মাসের মধ্যে ৩০৪ কেজি হেরোইন, ৫ কেজি কোকেনসহ তিন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণাদি সাপেক্ষে চয়েজ রহমান নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়। আলোচিত এই বিষয়ে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এই ঘটনার অংশ হিসেবে গতকাল পাঁচজনকে আটক করে র্যাব।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানান। বাংলাদেশে তাঁদের নিয়ন্ত্রক মো. আরিফ উদ্দিন। আরিফ উদ্দিনের আল-আমিন ফ্যাশন বায়িং হাউস নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরিফ ওই ব্যবসার অন্তরালে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের জানা মতে, আরিফ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে ওই মাদক চোরাচালান চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন বাংলাদেশি যুক্ত রয়েছেন। এই চক্র দেশের অভ্যন্তরেও মাদক (ইয়াবা) ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
আটক ব্যক্তিরা জানান, আরিফ নিজে রিক্রুটিং করতেন। এ ছাড়া রেহানা ও আটক রুহুল আমীন ওরফে সায়মন, রিক্রুটিংয়ের কাজ করতেন। রিক্রুটিংয়ের ক্ষেত্রে মূলত স্বল্পশিক্ষিত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্মার্ট মেয়েদের প্রাধান্য দেওয়া হতো। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে তাঁদের ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত করা হতো। তারপর বিশ্বস্তদের দেশের অভ্যন্তরে তাঁদের যে মাদক ব্যবসা আছে, সেখানে মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হতো।
পরবর্তী সময়ে দক্ষ হয়ে উঠলে তাঁদের বিদেশে পাঠিয়ে বিদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত এবং পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা হতো। পরে তাঁদের বিদেশে মাদক সরবরাহ ও বিতরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই মাদক সিন্ডিকেটের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। মাদক পরিবহনে বিভিন্ন পথ ব্যবহার করা হয়।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, এতে মনে হয়েছে, আরও জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে। তাঁরা সে জন্য কাজ করছেন।