সৌদি আরব থেকে ফেরত তাসলিমা আক্তার চেয়েছিলেন নিজের নামে একটি বাড়ি বানাবেন। দুই শতক জায়গাও কিনেছিলেন। তবে স্বামী আমান উল্লাহর নিক্ষেপ করা অ্যাসিডে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অ্যাসিডে ১৩ শতাংশ দগ্ধ হওয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি তাসলিমার চিকিৎসা খরচ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
১৭ থেকে ১৮ বছর আগে বিয়ে হয় নরসিংদীর তাসলিমার। সংসারে অভাব অনটন এবং স্বামী খরচ না দেওয়ায় ২০১৬ সালে তাসলিমা বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে সৌদি আরব যান কাজের জন্য। তিন সন্তানের জননী তাসলিমা গত দুই মাস আগে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে জানতে পারেন, গত সাত থেকে আট মাস আগে স্বামী গোপনে আরেক বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে স্বামীর নামে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলেও অশান্তি দেখা দেয়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকার করেন এবং তাসলিমার ভালো না লাগলে চলে যেতে পারেন বলেও জানিয়ে দেন। তাসলিমা বাচ্চাদের নিয়ে বাবার বাড়ির কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন এবং সেখানেই থাকছিলেন।
পরে দুই পরিবারের কথায় এবং স্বামীর দেওয়া আশ্বাসে তাসলিমা স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন বলে ঠিক করেন। ২১ জানুয়ারি স্বামী এবং তাঁর এক বোন এ ভাড়া বাড়িতে বেড়াতে আসেন। স্বামীর বোন চলে যান, স্বামী ওই বাড়িতেই স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে থাকেন। ভোর রাতে তাসলিমার চিৎকারে অন্য ভাড়াটিয়ারা এসে আমান উল্লাহকে পালিয়ে যেতে দেখেন। তাসলিমার বাবা ও অন্যরা খবর পেয়ে তাসলিমাকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
তাসলিমার বাবা খোরশেদ মিয়া নরসিংদীর মাধবদী থানায় মামলা করেছেন। আসামি এখন পর্যন্ত পলাতক।
অ্যাসিডে তাসলিমার মুখ ও বুকের বেশ কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে। চোখ-মুখ ফুলে যাওয়ায় তাসলিমা কথা বলতে পারছেন না। ইশারায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন।
আজ বুধবার বার্ন ইউনিটে তাসলিমার সঙ্গে থাকা ছোট বোন ইয়াসমীন প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁরা পাঁচ বোন। এক বোনের বিয়ে হয়নি। বাবার ডান হাত অবশ, কোনো কাজ করতে পারেন না। তাসলিমা বিদেশ গিয়ে যে টাকা উপার্জন করেছিলেন তা দিয়ে জমি কিনেছেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময় কথা শোনাতেন, তাই চেয়েছিলেন নিজের টাকায় বাড়ি করে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকবেন। তাসলিমা স্বামীর নামে যে টাকা পাঠিয়েছিলেন তার কোনো হিসাবই নেই। এখন তাসলিমার চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসবে তাই নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় আছেন।