চিকিৎসায় অবহেলায় এক শিশুর (৭) মৃত্যুর অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মক্কা-মদিনা নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক, চিকিৎসক, নার্সসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আজ বুধবার ভোররাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আতিকা নামের শিশুটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় তিন চিকিৎসক ও একজন নার্সকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তাঁরা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন এ কে এম নিজামুল ইসলাম, দেওয়ান মো. আনিছুর রহমান, মোস্তাকিম বিল্লাহ ওরফে মারুফ ও নার্স মুক্তা ভৌমিক।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪ (ক) ধারায় মৃত শিশুটির বাবা আজিম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আতিকার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার চর কিশোরগঞ্জে। গত মাসে দোলনা থেকে পড়ে আতিকার ডান ঊরুর হাড় ভেঙে যায়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানোর পরও পা ঠিক না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয় তাকে। এ সময় আতিকার সঙ্গে তার মা ও নানা ছিলেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পঙ্গু হাসপাতালের সামনে শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি তাঁদের বলেন, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অল্প খরচে ভাঙা পায়ের ভালো চিকিৎসা করা হয়। শাহজাহানের কথামতো আতিকাকে বিকেলেই ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা আতিকার মা ও নানাকে বলেন, আতিকার জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ জন্য ৩২ হাজার টাকা লাগবে।
অস্ত্রোপচারের পর আতিকাকে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু সারা রাতেও আতিকার জ্ঞান ফেরেনি। বুধবার ভোররাত চারটার দিকে নার্স মুক্তা ভৌমিক শিশু আতিকার সাড়া না পেয়ে চিকিৎসক মোস্তাকিম বিল্লাহকে ডেকে আনেন। তিনি আতিকার মুখ থেকে অক্সিজেনের নল খুলে ফেলেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মামলায় শিশুটির বাবা অভিযোগ করেন, স্ত্রীর কাছে খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় মক্কা-মদিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধারণ ও নিরীহ রোগীদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে আসছে। আসামিদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
ওসি আবদুল লতিফ জানান, গ্রেপ্তার তিন চিকিৎসকসহ চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে মক্কা-মদিনা হাসপাতালের তিন মালিক মো. নুর নবী ও তাঁর দুই ভাই আবুল হোসেন, নাসেরসহ এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।