কুয়েতে আটক সাংসদ শহিদ ইসলাম (পাপুল) দেশটির রাজনীতিবিদ, আমলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের খুঁজে খুঁজে ঘুষ দিতেন। আর বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাঁকে অন্যায়ভাবে সুবিধা পেতে তাঁরা সহায়তা করতেন। দুই পক্ষের মধ্যে এই লেনদেন দীর্ঘদিন ধরে চলছিল।
‘আরব টাইমস’, ‘আল কাবাস’, ‘আল সিয়াসাহ’, ‘আল রাই’সহ কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অভিমতে এসব কথা উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, কুয়েতের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের মদদে যে বাংলাদেশের সাংসদ মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের মতো অপরাধগুলো করেছেন, সেটি নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সাবেক ও বর্তমান সাংসদদের বিরুদ্ধে অনৈতিক এসব কাজে মদদ দেওয়ায় তোলপাড় চলছে কুয়েতের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
কুয়েতের আরবি দৈনিক ‘আল কাবাস’-এর এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহিদ ইসলামকে (পাপুল) জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে এ সপ্তাহের শুরুতে পাবলিক প্রসিকিউশনের দপ্তর পার্লামেন্টে একটি পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে। যেখানে আইনের অসংগতি আর মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে।
পাবলিক প্রসিকিউশনের দপ্তরের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনে বেশ কিছু অসংগতির কারণে রেসিডেন্ট পারমিটের ডিলারশিপ আর অবৈধ মুদ্রা পাচারের অপরাধে জড়িত অনেকে ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে পারেন। কুয়েতের অনেক সাংসদসহ অনেককে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। তেমনি অপরাধে মদদদানকারীদের অনেককে বাঁচানোর চেষ্টাও লক্ষ করা যাচ্ছে। কোনো কোনো সাংসদ অভিযুক্ত সহকর্মীদের রক্ষার জন্য আইনে সংশোধনের চেষ্টাও করছেন। অথচ অভিযুক্ত সাংসদেরা বাংলাদেশের আটক সাংসদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
‘আল কাবাস’-এর প্রতিবেদনটিতে শহীদ ইসলামের বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে দেশটির এয়ারবাস কেনাকাটার দুর্নীতিতে সাংসদের ঘুষ নেওয়ার প্রসঙ্গটিও এসেছে। এতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাংসদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার প্রেক্ষাপটে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা, দেশের ভাবমূর্তি আর পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
এদিকে শহিদ ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল জাররাহ আল সাবাহর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা চলছে। কারণ কুয়েতের শাসকদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই মেজর জেনারেল। তাই তাঁকে বরখাস্ত করার মধ্যে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।