সিআইডির অনুসন্ধান

অনলাইনে জুয়া, টাকা পাচার হচ্ছে রাশিয়ায়

অনলাইন জুয়া পরিচালনার সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি। যাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতীকী ছবি

সারা দেশে অনলাইন জুয়া পরিচালনার সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই চক্রের ১৫ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডি বলছে, রাশিয়ায় বসে তিন বাংলাদেশি দুটি ওয়েবসাইট খুলে অনলাইন জুয়া চালাচ্ছেন। জুয়ার টাকা ক্যামেরার ব্যবসার আড়ালে এবং অবৈধ ব্যাংকিং বা হুন্ডির মাধ্যমে রাশিয়ায় পাচার হচ্ছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে সারা দেশ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছেন এই চক্রের সদস্যরা। এই টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে জমা হয় ফজলুল হক নামে ঢাকার এক ক্যামেরা ব্যবসায়ীর পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে। পরে ব্যাংক হিসাব থেকে এই টাকা তুলে একটা অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন দেশে থাকা জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা। বাকি টাকা ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে রাশিয়ায় চক্রপ্রধানের কাছে পাচার হয়।

ফজলুল হক রাশিয়া ও দুবাই থেকে ক্যামেরা আমদানি করেন। ঢাকার পুরানা পল্টনের দারুস সালাম আর্কেড মার্কেটে সিমপেক্স করপোরেশন নামে তাঁর একটি ক্যামেরার দোকান রয়েছে। এই ব্যবসায়ীকে ৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরের দিন তিনি পাচারের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

এই অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী চক্র মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে, যার একটা অংশ রাশিয়ায় পাচার হয়।
কামরুল আহসান, অতিরিক্ত ডিআইজি, সিআইডি

এই প্রতিবেদক ১৩ ডিসেম্বর ফজলুল হকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সিমপেক্স করপোরেশনে গেলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালমানের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার এক ব্যবসায়ী দোকানের মালিকের ব্যাংক হিসাবে মাঝেমধ্যেই টাকা পাঠাতেন। পরে ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও পরিচিত ব্যক্তিরা দোকানে এসে নগদ টাকা নিয়ে যেতেন। এর জেরে তাঁদের মালিককে সিআইডি ধরে নিয়ে গেছে। মোহাম্মদ সালমান বলছেন, রাশিয়ার ওই ব্যবসায়ীর নামও ফজলুল। তাঁর স্ত্রী সম্প্রতি তিন দফায় এই ক্যামেরার দোকানে এসে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম স্টেশনের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ঋণপত্র বা এলসি খুলে রাশিয়া ও দুবাই থেকে কিছু ক্যামেরা এনে বিক্রি করেন ওই ব্যবসায়ী। তবে তাঁর অধিকাংশ ক্যামেরা আসে আকাশপথে ‘লাগেজ পার্টির’ মাধ্যমে। তিনি আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়েও টাকা পাচার করেন।

প্রসঙ্গত, ওয়েবসাইট খুলে অনলাইন জুয়া পরিচালনার সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের ৯ সদস্যকে গত নভেম্বর মাসে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে অক্টোবর মাসে আরেকটি অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী যে ওয়েবসাইটের খোঁজ সিআইডি পেয়েছে, সেটি পরিচালনা করা হয় রাশিয়া থেকে। সে দেশে বসে তিন বাংলাদেশি এই অনলাইন জুয়া পরিচালনা করেন।

জুয়ার ওই সাইটটিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, আইসিসির টি–২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরোপীয় ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগসহ বিভিন্ন ধরনের খেলায় বাজি ধরার ব্যবস্থা আছে। চাইলে যে কেউ ক্যাসিনোও খেলতে পারেন। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাঁদের মুঠোফোন অ্যাপও রয়েছে। তাঁদের সাইটে বলা হয়েছে, যাঁরা বাজি ধরতে আগ্রহী, তাঁদের প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। খেলার জন্য অনুমোদনহীন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে হবে। এ বিষয়ে গত ২৩ অক্টোবর প্রথম আলোতে প্রথম এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়।

সিআইডি বলছে, এই ওয়েবসাইটে জুয়া খেলতে ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কিনে খুলতে হয় একেকটি ‘অ্যাকাউন্ট’। টাকা লেনদেন হয় মুঠোফোনে আর্থিক সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘এই অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী চক্র মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে, যার একটা অংশ রাশিয়ায় পাচার হয়।’