অনুমোদনহীন দোকানে পাওয়া যায়, অনুমোদন পাওয়া দোকানে নয়

অধিকাংশ ক্যানসার রোগী মরফিন পাচ্ছেন না

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোসনে আরা রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর ব্যথা উপশমে নিয়মিত মরফিন দরকার। এই মরফিন কিনতে হিমশিম খাচ্ছে হোসনে আরার পরিবার।
হোসনে আরার ছেলে আলমগীর মিয়া গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ক্যানসার হাসপাতালের লোকেরা ধানমন্ডি এলাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ওষুধের দোকান থেকে মায়ের জন্য মরফিন কিনে আনতে বলেন। আলমগীর ২ জানুয়ারি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ওষুধের দোকানে গিয়ে মরফিন ট্যাবলেট পাননি। পরে অন্য একটি দোকান থেকে তিন গুণ দাম দিয়ে ওই ট্যাবলেট কিনেছেন।
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং ওষুধ বিক্রেতারা বলেছেন, মরফিন উৎপাদন, মরফিন বিক্রি, ব্যবস্থাপত্রে মরফিন লিখতে অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। মরফিন বিক্রি বা ব্যবহারের পর সরকারকে হিসাব দিতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হতে হয়।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার বলেন, ক্যানসার রোগীরা তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন, যন্ত্রণায় ছটফট করেন। তীব্র ব্যথা থেকে মুক্তি দেয় মরফিন। সারা পৃথিবীতে ক্যানসারের ব্যথা উপশমে এর ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ রোগী এই ওষুধ পাচ্ছেন না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেব বলেন, মরফিন প্রথম সারির মাদক হিসেবে স্বীকৃত। আশঙ্কা থাকলেও এ দেশে মাদক হিসেবে মরফিনের ব্যবহার হচ্ছে না। তবে এই ওষুধ বিক্রিতে লাভ কম বলে দোকানিরা এই ওষুধ দোকানে রাখেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা তো জোর করে কাউকে দোকানে মরফিন রাখতে বলতে পারি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ছয়টি ওষুধ কোম্পানির এই ওষুধ তৈরির অনুমতি আছে। বর্তমানে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল ও ইউনিমেড মরফিন ট্যাবলেট ও ইনজেকশন তৈরি করছে। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের বিপণন ব্যবস্থাপক কাজী মানসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ট্যাবলেট ও ইনজেকশন তৈরি আছে। সরকারের অনুমতি নিয়ে আসলেই আমরা সংশ্লিষ্ট দোকান বা হাসপাতালকে মরফিন দিচ্ছি।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় ২০০ ওষুধের দোকানে মরফিন বিক্রির অনুমতি আছে। কলাবাগানের একটি দোকানে লেখা আছে ‘এখানে মরফিন পাওয়া যায়’। গতকাল ওই দোকানের মালিক এই প্রতিবেদককে বলেন, মরফিন ট্যাবলেট বা ইনজেকশন কিছুই নেই। কবে আবার পাওয়া যাবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত কিছু বলতে পারেন না।
তবে মহাখালী ও শাহবাগের অনুমোদনহীন দোকানে মরফিন বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে ১০টি ট্যাবলেটের একটি প্যাকেটের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এরকমই একটি দোকান থেকে আলমগীর তাঁর মায়ের জন্য ওষুধ কিনেছেন। এই ট্যাবলেট দিনে ছয়টি সেবন করতে হয়।
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াররফ হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ ক্যানসার রোগী আছেন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোগীর ব্যথা উপশমে নিয়মিত মরফিন দরকার। কিন্তু অধিকাংশ রোগীই নিয়মিত মরফিন পাচ্ছেন না।
বিএসএমএমইউয়ের পেলিয়েটিভ সেবা কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়ক অধ্যাপক নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পেইন পলিসি স্টাডি গ্রুপের অনুমিত হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫২ কেজি মরফিন (অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বা মূল কার্যকরী উপাদান) দরকার। কিন্তু বাংলাদেশ পাঁচ কেজি মরফিনও ব্যবহার করছে না। তিনি বলেন, ব্যথায় কাতর একজন মানুষের ছয় মিলিগ্রাম মরফিন দরকার। আর বাংলাদেশের রোগীরা পাচ্ছে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম।