অতঃপর শাস্তি হিসেবে ছয়জনকে বদলি

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কারাগারের ভেতরে তৈরি করা মই বেয়ে আসামি পলায়নের ঘটনায় শাস্তি হিসেবে দুজন জেলার ও চারজনকে ডেপুটি জেলারকে বদলি করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তর থেকে জারি করা দুটি ভিন্ন প্রজ্ঞাপনে এই ছয়জনকে বদলি করা হয়েছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার মোহাম্মদ বাহারুল ইসলামকে রাঙামাটি কারাগারে ও জেলার (উপ তত্ত্বাবধায়ক) মোহাম্মদ মাহবুব কবীর নড়াইল জেলা কারাগারে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে ডেপুটি জেলার নূর মোহাম্মদ সোহেলকে চুয়াডাঙ্গা, ফারুক হোসেনকে নাটোর, মনির হোসেনকে ভোলা ও আখেরুল ইসলামকে মাগুরা জেলা কারাগারে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান কারারক্ষী ও অন্যান্য কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কারাগারের ভেতরে তৈরি করা মই বেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পালানোর পর তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে জেলার বাহারুলের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর অধস্তনদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া একজন ডেপুটি জেলারকে মৌখিকভাবে কর্ম থেকে বিরত রাখা যায় না। তাঁকে লিখিতভাবে ছুটি/বিশ্রাম দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি কর্তব্যে চরম অবহেলা করেছেন এবং চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই জেলার মো. বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। উক্ত ঘটনায় তিনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁর দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই মর্মে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

জেলার (উপ–তত্ত্বাবধায়ক) মোহাম্মদ মাহবুব কবীর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাঁর জবানবন্দির সঙ্গে তাঁর দায়িত্বের মিল নেই। তাই ডেপুটি জেল সুপার মাহবুব কবিরের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

ডেপুটি জেলার মো. ফারুক হোসেন, ডেপুটি জেলার মো. মনির হোসেন, ডেপুটি জেলার মো. আখেরুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার নূর মোহাম্মদ সোহেলের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-এঁরা প্রত্যেকেই কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হলো। এ ঘটনায় তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁদের কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কারাগারে পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্তত ২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, বিভাগীয় ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে জেলা কারাগারে পদায়ন ও কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আগের তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো কারা কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। কিন্তু এবার কারা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়েই তদন্ত করা হয়েছে। তাই কয়েকজনকে বদলি করা হলো।

প্রসঙ্গত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক ৬ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় কাঁধে একটি মই নিয়ে সাধারণ পোশাকে ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ওই সময় তাঁর আশপাশে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা ঘোরাফেরা ও গল্প করছেন। ছিদ্দিক মইটি কাঁধে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র ভবনের বাইরের ফটক দিয়ে বেরিয়ে মাঠের ভেতর দিয়ে কারাগারের মূল ফটকের দিকে যান। মূল ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর সামনে দিয়ে মই নিয়ে গেলেও তিনি বাধার সম্মুখীন হননি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মই পড়ে থাকতে দেখে একজন কারারক্ষী মইটি কয়েদি গোয়েন্দা জাকিরকে দিয়ে কেস টেবিলে পাঠান। সে সময় কেস টেবিলে সর্বপ্রধান কারারক্ষী বসা ছিলেন। তদন্ত কমিটির ঘটনার বর্ণনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।