করোনা পরিস্থিতি

১১ দিন ধরে ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত

গত জানুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ৭৩ শতাংশই টিকা নেননি।

দেশে টানা ১১ দিন ধরে দৈনিক ১০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারিতে এমন সংক্রমণ পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। এর আগে সর্বোচ্চ টানা ৬ দিন ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা নেওয়া থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে, হাসপাতালেও রোগী কম ভর্তি হবে। মৃত্যু কমে আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত জানুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ৭৩ শতাংশই টিকা নেননি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ১২ হাজার ১৯৩ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছেন ৩৬ জন। এ নিয়ে টানা ৪ দিন ধরে করোনায় ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই মহামারিতে সংক্রমণ চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার সময় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার ধারণ করেছিল। সে সময় তিন দফায় টানা ৬ দিন করে ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

গত বছরের ১১ থেকে ১৬ জুলাই, ২৫ থেকে ৩০ জুলাই এবং ১ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। গত বছরের আগস্টের শেষ থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। চার মাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার রোগী বাড়তে শুরু করে।

জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে নতুন রোগী ও শনাক্তের হার আবারও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ২৩ জানুয়ারি ১০ হাজার ৯০৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়, যা দেশে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের ঘটনা।

দেশে কিছুদিন ধরে যে হারে নতুন রোগী বাড়ছে, তাতে সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৪ হাজার ৪৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে করোনা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি হবে।

২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ২৪ হাজার ১৮০ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৪৬১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২০৩ জন।

৭৩ শতাংশের টিকা নেওয়া ছিল না

দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে। গত ডিসেম্বরে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ৯১ জন। আর জানুয়ারি মাসে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের।

গতকাল অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, জানুয়ারিতে মৃত ৩২২ জনের মধ্যে ২৩৪ জন, অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ করোনা টিকা নেননি। ২৭ শতাংশ বা ৮৮ জন টিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ১৮ জন আর দুই ডোজ নিয়েছিলেন ৬৮ জন। তবে মৃতদের মধ্যে মাত্র দুজন বুস্টার বা তৃতীয় ডোজের টিকা পেয়েছিলেন।

করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক অমিক্রনের একটি উপধরন (বিএ.২) বিশ্বের ৫৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ তথ্য জানিয়েছে। বুলেটিনে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে, অমিক্রনের মূল ধরনের চেয়ে উপধরন ‘বিএ.২’ অনেক বেশি সংক্রামক হতে পারে। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, যাতে রোগীর সংখ্যা যেন না বাড়ে।