সীমান্তের জেলা থেকে ফোন বেশি আসছে

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

সীমান্তের জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সেখানকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। এসব জেলা থেকে করোনাসংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরে ফোন করে টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। তথ্য বলছে, সীমান্তের ২১টি জেলার মানুষ টেলিমেডিসিন সেবা বেশি নিচ্ছেন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের পাশাপাশি করোনার উপসর্গ নিয়েও অনেকে ফোন দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মোট শনাক্ত রোগী থেকে সুস্থ হওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের বাদ দিলে গতকাল মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৪৭ হাজার ৬৭ জন। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ৩ হাজার ৮৩ জন, বাকি ৪৩ হাজার ৯৮৪ জন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্থাৎ, বর্তমানে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের সাড়ে ৯৩ শতাংশই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে।

বাড়িতে থাকা রোগীদের একটি অংশের ভরসা টেলিমেডিসিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ দেশের মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে।

দেশে তিন সপ্তাহ ধরে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। করোনায় মৃত্যুও বাড়তে শুরু করেছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি বাড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত শয্যাগুলো রোগীতে পূর্ণ। ফলে রোগীদের বড় অংশকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই সীমান্তের জেলাগুলো থেকে স্বাস্থ্য বাতায়নে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। মে মাসের ১৫ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল এসেছিল ময়মনসিংহ জেলা থেকে, সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৯। এরপর লালমনিরহাট, যশোর, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, বান্দরবান, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে করোনাসংক্রান্ত সেবা নিতে ফোন বেশি এসেছে। নাটোর, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, পিরোজপুর, মেহেরপুর ও রাঙামাটি জেলা থেকেও টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়া বেড়েছে।

করোনা নিয়ে চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে সবচেয়ে বেশি ৪২৬টি কল এসেছে লালমনিরহাট জেলা থেকে। এর মধ্যে ১ জুন এক দিনে সবচেয়ে বেশি ৯২টি কল আসে যশোর জেলা থেকে। রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও কক্সবাজার থেকে ৮৪টি করে ফোনকল আসে।

ময়মনসিংহ জেলায় ১ জুন বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩৪১ জন। সেদিন ময়মনসিংহ থেকে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে ৮৪ জন টেলিমেডিসিন সেবা নিতে ফোন করেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গত বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টেলিমেডিসিন সেবা চালু ছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে টেলিমেডিসিন সেবা চালু রয়েছে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পক্ষে টেলিমেডিসিন সেবা পরিচালনা করত ‘মাই হোম ডক্টর বিডি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, টেলিমেডিসিন সেবা চালুর পর অনেক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। করোনা রোগী কমে যাওয়ায় এবং আর্থিক কারণে সিটি করপোরেশন গত নভেম্বরে সেবাটি বন্ধ করে দেয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শারমিন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে। তিনটি নম্বরে দিনে ৮-১০টি ফোন আসে।

রাজশাহীতে ১ জুন করোনার চিকিৎসাধীন রোগী ছিল ১ হাজার ৫২৫ জন। সেদিন রাজশাহী থেকে করোনাসংক্রান্ত সেবা নিতে স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন আসে ৮৪টি। লালমনিরহাটে চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জনের। কিন্তু এই সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়নে লালমনিরহাট থেকে সেবা নিয়েছেন ৪২৬ জন।

স্বাস্থ্য বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৫ জুনের মধ্যে করোনাসংক্রান্ত যত সেবা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৪৬ শতাংশ করোনা রোগী এবং উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির চিকিৎসাসেবা। ১৩ শতাংশ ছিল হাসপাতাল–সংক্রান্ত। করোনা পরীক্ষাসংক্রান্ত ১৯ শতাংশ। করোনার টিকাসংক্রান্ত ১২ শতাংশ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি স্বাস্থ্য বাতায়নের কল সেন্টারটি পরিচালনা করে। সিনেসিস আইটি লিমিটেডের হেলথ বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগে এসব জেলা থেকে ফোনকল কম আসত। করোনায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে ফোন দিচ্ছেন। যাঁরা সেবা নিচ্ছেন, তাঁদের বড় অংশ পুরুষ এবং বয়সে তরুণ।