দেশে টানা ১০ দিন ধরে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে আরও ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। টানা ১০ দিন ধরে প্রতিদিন দুই শতাধিক মৃত্যু দেখছে বাংলাদেশ। এ সময় গড়ে প্রতিদিন ১৪ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে সংক্রমণের ১৬ মাসে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। নতুন রোগী বাড়তে থাকায় আগামী সপ্তাহখানেক পর থেকে দৈনিক মৃত্যু আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
এখন বিশ্বের যেসব দেশে করোনায় মৃত্যু বেশি হচ্ছে তার একটি বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এক সপ্তাহে (২ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ) সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে, এমন দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তালিকায় প্রথম ইন্দোনেশিয়া, দ্বিতীয় ব্রাজিল, তৃতীয় রাশিয়া, চতুর্থ স্থানটি ভারতের। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারের অবস্থান ষষ্ঠ। আর মোট মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ ২৯তম। মোট মৃত্যুতে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় ব্রাজিল আর তৃতীয় ভারত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনায় সংক্রমিত হয়ে আরও ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭৬ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩। মোট মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৭ জনের। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫ জন।
চলতি বছরের জুন থেকে দেশে করোনার ডেলটা ধরন (ভেরিয়েন্ট) ছড়াতে শুরু করে। করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে শুরু করলে গত ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ জারি করেছিল সরকার। তবে সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আট দিনের জন্য বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল। ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিল। বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে ঈদের পরে করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত আগের চেয়ে বেড়েছে। সংক্রমণের গতি ঠেকাতে ঈদের পর থেকে আবারও দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সেটি এখনো চলছে। গতকাল বিধিনিষেধ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
সংক্রমণের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধের প্রভাবে সংক্রমণ কমতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব সংক্রমণচিত্রে দেখা যাচ্ছে না। তবে তিন দিন ধরে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার সামান্য কমতে দেখা গেছে। অবশ্য এখনো সে হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছিই আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫ হাজার ২৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার আগের দিন ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
শনাক্তের হার সামান্য কমলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে বাংলাদেশ এখনো অনেক দূরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারণ করা মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সামনে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা আছে।