গতকাল শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৮ জন রোগী ছিল।
ঢাকা মেডিকেলেও প্রতিদিন গড়ে করোনায় আক্রান্ত ২০ শিশু ভর্তি হচ্ছে।
চার বছরের তাওসিফ খিঁচুনির সমস্যা নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় মাসখানেক আগে। এর মধ্যেই তার করোনা ধরা পড়ে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের শিশুটির শয্যাপাশে আছেন মা। খালা তাসলিমা থাকেন ওয়ার্ডের বাইরে মাদুর বিছিয়ে, যেখানে অন্য শিশু রোগীর স্বজনেরাও থাকেন পালা করে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৮ জন রোগী ছিল। ইউনিটের ২০ শয্যার সব কটিই পূর্ণ ছিল বুধবারে। বৃহস্পতিবার ১০ দিন বয়সী এক নবজাতক মারা যায়, যার রক্তে সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া ছিল। পরে করোনাও ধরা পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই অন্যান্য জটিল রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও প্রতিদিন গড়ে করোনায় আক্রান্ত ২০ শিশু ভর্তি হচ্ছে।
সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আক্রান্ত বাড়ছে শিশুদের মধ্যেও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত করোনায় শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ৫৪ জন মারা গেছে। এ ছাড়া ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে মারা গেছে ১০৯ জন। গতকাল অধিদপ্তর ২৪ ঘণ্টায় ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ২ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয়।
নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষার পর করোনা ধরা পড়ে ছয় বছরের তাহমিদের। ওর মা রুমা বলেন, জ্বর না কমার কারণে গত ৬ জুলাই ছেলেকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওর অন্য অসুখ নেই। এখন সে ভালো আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই অন্যান্য জটিল রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত। তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই তারা করোনায় সংক্রমিত হয়। যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের প্রায় সবার জটিল রোগ ছিল। এ ছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতাল এক গবেষণা করে দেখেছে, নবজাতকদের ২ শতাংশ করোনায় সংক্রমিত।
শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৫২৩ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩২ জন, যাদের অন্য জটিল ছিল।
শিশু হাসপাতাল গত সপ্তাহে ১ হাজার ৪০০ নবজাতকের ওপর করা একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, নবজাতকদের ২ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ নবজাতকের করোনা ধরা পড়ে। এর মধ্যে এক দিন বয়সী দুই নবজাতক ছিল। এ ছাড়া শরীরে করোনার উপস্থিতি নিয়ে মৃত্যু হওয়া নবজাতকের সংখ্যা ৭, যারা অন্য রোগেও আক্রান্ত ছিল।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, এক দিন বয়সী এক বাচ্চার মা ছিলেন আরেক হাসপাতালে। বাচ্চার করোনা ধরা পড়ার পর মায়ের করোনা পরীক্ষা করানো হয় এবং নেগেটিভ আসে। তিনি বলেন, যে ৩২ নবজাতকের করোনা ধরা পড়ে, তাদের ২৬ জন মায়ের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে মাত্র ৩ জনের পজিটিভ ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি থেকে আমরা ধারণা করছি যে মা ছাড়াও বাচ্চাদের অন্য যে পরিচর্যাকারী আছেন, তাঁদের মাধ্যমে বাচ্চারা আক্রান্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, যে শিশুরা এখন করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি আছে, তাদের সঙ্গে থাকা মায়েদের সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু অধিকাংশই আক্রান্ত নন। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের তাদের পরিচর্যাকারীদের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগেও করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ বিভাগের করোনা ইউনিটে ৩১টি শয্যা আছে। গড়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ জন ভর্তি থাকছে।
শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইফফাত আরা শামসাদ প্রথম আলোকে বলেন, বছরের শুরুতে গড়ে পাঁচ–ছয়জন করে রোগী আসত। এখন রোগী অনেক বেড়েছে। কখনো পুরো ইউনিটও ভর্তি থাকে। এ সপ্তাহে একটি শিশু মারা যায়। শিশুটির লিউকোমিয়া ছিল।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩২৬ শিশুর শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১১০ জন। এদের প্রায় সবারই অন্য রোগ ছিল।
অধ্যাপক ইফফাত আরা বলেন, যেসব শিশু অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকে, তারা সহজে সংক্রমিত হয়। এ জন্য যেসব বাচ্চারা বিভিন্ন অসুখে ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা দেখাতে হবে। এই শিশুরা নাজুক থাকে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, বড়দের মাধ্যমেই শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের করোনা হলেও উপসর্গ খুব সামান্য থাকে। শিশু আক্রান্ত হলে তাদের মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঘরে শিশু ও বয়স্ক থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সাবধানে থাকতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে শিশুদের কাছে যাওয়া যাবে না।