রোগী শনাক্তের হার কমছে, তবু শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

দেশে পরীক্ষার তুলনায় করোনা রোগী শনাক্তের হার কমছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রোগী শনাক্তের হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সপ্তাহওয়ারি হিসাবে টানা সাত সপ্তাহ সংক্রমণ শনাক্তের হার কমতির দিকে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে এ হার এখনো বেশি। সংক্রমণ শনাক্তের হার বেশি, এমন শীর্ষ দশটি দেশের একটি বাংলাদেশ।

কোনো দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না, সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিছু নির্দেশক রয়েছে। এগুলো আমলে নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো রোগী শনাক্তের যে হার, তাতে বাংলাদেশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা থেকে বেশ দূরে। টানা তিন সপ্তাহ যদি পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যায়। সে ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন ন্যূনতম ২০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে এবং দেশের সব জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে পশুর হাট ও গ্রামে যাতায়াতকেন্দ্রিক যে লোকসমাগম হয়েছিল, তাতে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ছাড়া প্রায় সবকিছুই খুলে গেছে এবং সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধিও পুরোপুরি মানতে দেখা যাচ্ছে না। এতে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের তথ্য তেমনটা বলছে না। এই তথ্য নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কারও কারও প্রশ্ন আছে।

৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করে সরকার। শুরুর দিকে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার কম ছিল। ক্রমে সেটা বাড়তে থাকে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক দিন বাদে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২০-২৫ শতাংশ। গত ২১ আগস্ট থেকে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে থাকছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ; যা গত তিন মাসের মধ্যে এক দিনে সর্বনিম্ন শনাক্তের হার।

সপ্তাহওয়ারি হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে সংক্রমণের ২০ তম সপ্তাহ (১৯-২৫ জুলাই) থেকে সংক্রমণ শনাক্তের হার ক্রমে কমছে। ওই সপ্তাহে মোট পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর প্রতি সপ্তাহেই আগের সপ্তাহের চেয়ে শনাক্তের হার কিছু কমতে দেখা গেছে। সংক্রমণের ২৪ তম সপ্তাহে এই হার এসে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ০৬ শতাংশে। আর ২৫ তম সপ্তাহে (২৩-২৯ আগস্ট) সেটা আরও কমে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশে। এখন চলছে সংক্রমণের ২৬ তম সপ্তাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি সপ্তাহের পাঁচ দিনে মোট পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট পরীক্ষার তুলনায় দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ। বিশ্বের প্রায় সব দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্য অনুযায়ী, মোট পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। আর দৈনিক শনাক্তের হার বিবেচনায়ও (গত ২৮ আগস্টের হালনাগাদ তথ্য) বাংলাদেশ শীর্ষ দশটি দেশের একটি।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৯৩টি পরীক্ষাগারে ১৪ হাজার ৪২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন মারা গেছে। এ নিয়ে মোট ৪ হাজার ৩৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছেন মোট ২ লাখ ১৩ হাজার ৯৮০ জন।

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, এটা সংক্রমণের বাস্তবচিত্র নির্দেশ করছে না, এটা নানাভাবে প্রমাণ করা যায়। পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টেস্টিং (পরীক্ষা), ট্রেসিং (সন্দেহভাজন রোগী শনাক্তকরণ), আইসোলেশন (বিচ্ছিন্নকরণ)—এগুলোর কোনোটিই দেশে সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাহলে সংক্রমণ কমবে কেন? সব খুলে দেওয়া হয়েছে, কেউ কিছু মানছে না। কিছুদিনের মধ্যে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।