কার্যকারিতার হার বিবেচনায় নিয়ে এখনো কেউ কেউ পছন্দের কোম্পানির করোনার টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। তাঁদের ধারণা, ওই কোম্পানির টিকা নিলে তিনি বেশি সুরক্ষিত হবেন। তবে সারা বিশ্বেই এখনো সব কোম্পানির টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় কোভিড–১৯–এ গুরুতর অসুস্থতা বা প্রাণহানি এড়াতে অনুমোদিত টিকাগুলোর যেটা পাওয়া যায়, সেটাই নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকায় থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সেই পরামর্শ দিয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়ন অনুযায়ী, মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের করোনার টিকা ‘নিরাপত্তা’ ও ‘কার্যকারিতা’র সব শর্ত পূরণ করেছে। আর এখন পর্যন্ত এই ছয়টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে স্বল্পতার কারণে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ আছে। বর্তমানে প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই নিয়ে নিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘আপনার কাছে যে টিকাটি প্রথমেই সহজলভ্য, তা যে টিকাই হোক নিয়ে নিন। এমনকি আপনি ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকলেও। যখনই আপনার সুযোগ আসবে, অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য, এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোনো টিকাই শতভাগ প্রতিরক্ষামূলক নয়, অনুমোদিত টিকাগুলো করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়া থেকে উচ্চ মাত্রায় সুরক্ষা দেয়।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির ফাইজার ও মডার্নার টিকার কার্যকারিতার হার যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৪ শতাংশ। এ ছাড়া সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতার হার ৭৯ শতাংশ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬৭ শতাংশ, জনসন অ্যান্ড জনসনের ৬৬ শতাংশ ও সিনোভ্যাকের ৬৫ শতাংশ। দ্য ল্যানসেট, সিনহুয়াসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকারিতার হারের এই পরিসংখ্যানই অনেককে বিভ্রান্ত করছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কীভাবে হয়, সে বিষয়ে জানা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কয়েকটি দেশে হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বয়স, উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন ব্যক্তিসহ নানা ধরনের মানুষকে বাছাই করা হয়।
টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় তিনটি ধাপে। প্রথম দুই ধাপে স্বল্পসংখ্যক লোককে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে টিকাটি যাঁদের লক্ষ্য করে তৈরি (যেমন নির্দিষ্ট বয়স, শারীরিক অবস্থা) তাঁদের দেওয়া হয়। আর তৃতীয় ধাপে দেওয়া হয় হাজার হাজার লোককে। এখানে দেখা হয় টিকার কার্যকারিতা ও তা কতটা নিরাপদ।
শেষ ধাপে অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করা হয়—একদলকে দেওয়া হয় টিকা, অন্যদের দেওয়া হয় প্লাসিবো। প্লাসিবো সাধারণ ওষুধ, যা ক্ষতি করে না, হতে পারে ভিটামিন ওষুধও। অংশগ্রহণকারীরা জানেন না, তাঁরা টিকা পেয়েছেন নাকি প্লাসিবো।
এরপর অংশগ্রহণকারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে পাঠানো হয়। মাঝে কয়েক মাস গবেষকেরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখেন, তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন কি না।
ল্যানসেটের তথ্যমতে, ফাইজারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেন ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ। শেষে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন মোট ১৭০ জন।
কোন দলে কতজন সংক্রমিত হয়েছেন, সে হিসাবেই নির্ধারিত হয় টিকার কার্যকারিতার হার। সংক্রমিত ১৭০ জনের সবাই প্লাসিবো দলের হলে, টিকা নেওয়া কেউই আক্রান্ত না হলে কার্যকারিতা হতো শতভাগ। আবার সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংখ্যা দুই দলে সমান হলে, টিকা হতো পুরোপুরি অকার্যকর।
কিন্তু ফাইজার–বায়োএনটেক টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সংক্রমিত ১৭০ জনের ১৬২ জন ছিলেন প্লাসিবো গ্রহণকারীদের দলের, টিকা নেওয়া দলের ছিলেন ৮ জন। শতকরা হিসাব করলে দাঁড়ায়, টিকা নেওয়া ৮ জন প্লাসিবো নেওয়া ১৬২ জনের মধ্যে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ কার্যকারিতার হার ৯৫ শতাংশ।
তাঁর অর্থ এই নয় যে টিকাগ্রহীতাদের ৯৫ শতাংশ সুরক্ষিত, আর ৫ শতাংশ অরক্ষিত। এর মানে এটাও নয় যে টিকাটি ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজ করবে, বাকি ৫ শতাংশ সময় কাজ করবে না। বরং বিষয়টি এমন, টিকাগ্রহীতারা করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাঁরা টিকা না নেওয়াদের চেয়ে ৯৫ শতাংশ সুরক্ষিত থাকবে। অথবা টিকাগ্রহীতাদের অন্য ব্যক্তিদের চেয়ে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ কম।
প্রতিটি টিকার কার্যকারিতার হার এভাবেই নির্ধারিত হয়। কিন্তু একেক টিকার কার্যকারিতার হার কেন একেক রকম?
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মো. খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, টিকা কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, যেখানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে, সেখানকার জনগোষ্ঠীর ওপর কার্যকারিতার হার নির্ভর করে। এ ছাড়া কোনো এলাকার মানুষ আগে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কি না, পুষ্টি অবস্থাসহ আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। তবে আমরা টিকার কার্যকারিতার হার নির্ধারণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সময় ও স্থান বিশ্লেষণ করব।
যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেসব এলাকায় পরীক্ষা হলে স্বাভাবিকভাবেই কার্যকারিতার হার কিছুটা কম হবে। আবার একই এলাকায় পরীক্ষা হলেও সংক্রমণের হার একেক সময়ে একেক রকম হতে পারে। ফলে সেসব এলাকায় কোন সময় পরীক্ষাটি করা হয়েছে, তার ওপরও টিকার কার্যকারিতার হার নির্ভর করে।
শুরুতে সময়ের দিকটি দেখা যাক। এ ক্ষেত্রে ফাইজার ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার তুলনা করা যাক। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের পরীক্ষা হয় ২০২০ সালের ২৭ জুলাই (দৈনিক শনাক্ত ৫৬ হাজার ৮৪৪) থেকে ১৪ নভেম্বর (দৈনিক শনাক্ত ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৯)। তখন দৈনিক শনাক্ত তুলনামূলকভাবে কম ছিল, যা পরে ক্রমাগত বাড়ছিল।
অপর দিকে জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর (দৈনিক শনাক্ত ৫০ হাজার ৭২৩) থেকে ২০২১ সালে ২২ জানুয়ারি (দৈনিক শনাক্ত ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫৬) পর্যন্ত। অর্থাৎ শনাক্ত তখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। এমনকি মাঝে সংক্রমণ দুই দিন ছিল প্রায় ৩ লাখ।
অর্থাৎ দেশটিতে ফাইজারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় সংক্রমণ ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু জনসন অ্যান্ড জনসনের পরীক্ষার সময়ে অংশগ্রহণকারীদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল বেশি। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত করোনাভাইরাসের চারটি ‘উদ্বেগজনক ধরনের’ মধ্যে তিনটিই যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয় জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা পরীক্ষার সময়। দেশটিতে করোনার আলফা ধরন শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর, আর বিটা ও গামা ধরন শনাক্ত হয় যথাক্রমে ২০২১ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি।
বিপরীতে সেখানে ফাইজারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় করোনাভাইরাসের চারটি উদ্বেগজনক ধরনের কোনোটিই দেখা যায়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশে অনুমোদিত ছয়টি টিকা তুলনা করলে দেখা যায়, আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা টিকার কার্যকারিতার হার বেশি, পরেরগুলোয় কম।
এবার আসা যাক দেশের হিসাবে। ফাইজারের টিকার পরীক্ষা হয় ছয়টি দেশে, জনসন অ্যান্ড জনসনের আটটি দেশে। যদিও এ দুটি টিকার পরীক্ষা চালানো হয় ব্রাজিলে। করোনার গামা ধরনের উৎপত্তি হয় এ দেশে। আর এটি শনাক্ত হয় ২০২০ সালের নভেম্বর। এই সময় সেখানে জনসন অ্যান্ড জনসনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছিল।
এসব কারণেই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে করোনাভাইরাসের কোনো টিকার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কার্যকারিতার হার থাকলেই তা অনুমোদন দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা কোন ধরনের, তার ওপরও টিকার কার্যকারিতার হার নির্ভর করে। বর্তমানে মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ), এডিনোভাইরাসনির্ভর টিকা, ইনঅ্যাকটিভেটেড ভাইরাস (ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় বা অকার্যকর করা) দিয়ে তৈরি টিকা বাজারে এসেছে।
ফাইজার ও মডার্নার টিকা এমআরএনএভিত্তিক, এডিনোভাইরাসভিত্তিক টিকা জনসন অ্যান্ড জনসন ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং নিষ্ক্রিয় ভাইরাস দিয়ে তৈরি সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা।
সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাইরাস অকার্যকর বা নিষ্ক্রিয় করে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা হয়। ফলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে না।
এডিনোভাইরাসভিত্তিক টিকায় এডিনোভাইরাসে করোনাভাইরাসের অংশবিশেষ বা স্পাইক প্রোটিন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এডিনোভাইরাস একধরনের ভাইরাস, যা মানুষের খুব বেশি ক্ষতি করে না। এর ফলে মানুষের ঠান্ডাজাতীয় উপসর্গ, জ্বর, গলাব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা দেয়।
আর এমআরএনএ টিকা খুব সম্প্রতি উদ্ভাবিত টিকা। এটি বহিরাগত ভাইরাসের আক্রমণ তুলনামূলক দ্রুত চিনে ফেলে। এতে একটা লিপিড বা তৈলাক্ত আবরণ থাকে। গরম স্থানে রাখলে লিপিড গলে যায়। এ জন্যই মডার্নার টিকা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও ফাইজারের টিকা মাইনাস ৬০ থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের টিকাগুলো কতটা ফাইন–টিউনিং (সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে সূক্ষ্ম সমন্বয়) করা হচ্ছে, কোন সিকোয়েন্স ও প্রজন্মের ভাইরাস ব্যবহার করা হচ্ছে, এসবের ওপর টিকার কার্যকারিতার হার অনেক সময় নির্ভর করে।
এমআরএনএ–ভিত্তিক টিকা ফাইজার ও মডার্নার টিকার চাহিদার বিষয়ে আইইডিসিআরের অন্যতম উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, নতুন আবিষ্কারে চাহিদা বেশি থাকে সব সময়। এর মানে এই নয় যে পুরোনোগুলো অকার্যকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) মতে, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে টিকা অসুস্থ হওয়া ঠেকাতে পারে, তবে সবার ক্ষেত্রে নয়। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, টিকা কখনো শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। কাজেই ‘ব্রেকথ্রু ইনফেকশন’ ঘটতে পারে, অর্থাৎ কেউ দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও সংক্রমিত হতে পারেন। তবে যত বেশি মানুষ টিকা গ্রহণ করবেন, তত কমসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসবেন। টিকাগ্রহীতার গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা মারা যাওয়ার ঘটনা কম।
বিষয়টি এভাবে বোঝানো যায়। করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলে সর্বোচ্চ পরিণাম মৃত্যু, আর সর্বনিম্ন আপনি সংক্রমিত হবেন না। আর সংক্রমিত হলে উপসর্গ না–ও দেখা দিতে পারে, আবার সামান্য উপসর্গ বা কঠিন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তিরও প্রয়োজন হতে পারে। তবে টিকা নেওয়ার পর সংক্রমিত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, টিকা নিলে মৃত্যুহার প্রায় শূন্যতে নেমে আসে। বিশ্বে যতগুলো টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে, প্রতিটিই কার্যকর।
করোনাভাইরাসের টিকা দুটি কাজ করে—হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করে ও সংক্রমণের হার কমায়। একটা দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে দিতে পারলে এটা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এ এস এম আলমগীর।
একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট অনুপাতে টিকা দেওয়া হলে ওই কমিউনিটিতে আর সংক্রমণ না ছড়ানোকে বলে হার্ড ইমিউনিটি।
করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতার হার গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটিই একমাত্র বিষয় নয়, বিশেষ করে মহামারির এই সময়ে।
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মো. খালেকুজ্জামান বলেন, সর্বোচ্চ কার্যকর টিকার ওপর সবাই নির্ভর করলে একটি বড় জনগোষ্ঠীই টিকা পাবে না। সে জন্য কার্যকারিতার হার কমবেশি হলেও বহু মানুষকে টিকার আওতায় আনতে এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া টিকার কার্যকারিতার হারের সঙ্গে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হলো, করোনাভাইরাসের টিকার উদ্দেশ্য।
চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘আমরা শুধু সংক্রমণই কমাতে চাচ্ছি না। আমরা জানি, প্রতিটি টিকাই এখন পর্যন্ত রোগের তীব্রতা কমায়। এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। টিকার কার্যকারিতার হারের সংখ্যাগুলো এ বিষয়টার প্রতিনিধিত্ব করে না।’
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘শতভাগ কার্যকারিতা আছে, এমন টিকা ব্যবহার করতে পারলে শতভাগ নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে এমন টিকা বিরল। বিশ্বে যতগুলো টিকা এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে, সব কটিই কার্যকর। আর প্রতিটি টিকাই অতিমারির সময় সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করবে।’