করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ, উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখাসহ ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে দেশবাসীকে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
বিধিনিষেধগুলো হলো বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। আর সব ধরনের যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদ থাকতে হবে।
উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখা এবং দোকান, শপিং মল, বাজার ও হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। না পরলে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া ও আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে। আর ১২ বছরের বেশি বয়সী সব ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত তারিখের পর টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে আজই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১২ জানুয়ারির পর টিকা দেওয়া ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে না। যারা টিকা দিতে পারেনি, তারা আপাতত অনলাইন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবে। আর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধিনিষেধের মধ্যে আরও রয়েছে স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো। ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। স্থলবন্দরগুলোতে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক থাকতে পারবেন, কোনো সহকারী আসতে পারবেন না। বিদেশগামীদের স্বাগত জানাতে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। এই বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিশ্চিত করবেন। আর সর্বসাধারণের করোনার টিকা ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিতে হবে।
এ ছাড়া কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সব জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং বিভাগীয় কমিশনারদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরেোধ করা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বাড়ছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে।
গত মাসের প্রথম দিকেও করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। তবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। গত মাসের শেষ দিকে যেখানে দৈনিক রোগী শনাক্ত ৫০০-এর ঘরে ছিল, সেখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেই সংখ্যা ২ হাজার ২৩১ জনে পৌঁছেছে। আর পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরন এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে এখন দিনে করোনা রোগী শনাক্ত দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে মাসখানেক আগে এই সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি ছিল। করোনার বিস্তার ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।