করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে নানা ধরনের ভিটামিন-মিনারেল বড়ি খাওয়ার হিড়িক পড়েছে। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, এমন কোনো জাদুকরি খাবার বা বড়ি নেই, যা খেলে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সামাজিক দূরত্ব, বারবার হাত ধোয়া আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এ ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র। তবে এটাও ঠিক যে, সঠিক সুষম ও পুষ্টিকর খাবার যেকোনো রোগ, বিশেষ করে সংক্রামক রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায়।
• বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই নানা ধরনের ফ্লু আর নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়ার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। ভিটামিন সি, ডি, ই এবং খনিজের মধ্যে জিংক, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে লাগে। তার মানে এই নয় যে এগুলোর সাপ্লিমেন্ট খেলে আপনি নিরাপদ থাকবেন।
• যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন বলছে, রোগ প্রতিরোধ করতে বাজারের সাপ্লিমেন্ট কাজে আসবে—এমন দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ভিটামিন সি নিয়ে ইতিমধ্যে চীনে দুটি গবেষণা হয়েছে আর জিংক নিয়ে গবেষণা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ইনস্টিটিউটে (এনআইএইচ)। এসব গবেষণায় কিছুটা উপকার দেখা গেলেও এগুলো রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
• তবে গবেষকেরা এ-ও বলছেন, সাপ্লিমেন্ট বা বড়ির বদলে এই মুহূর্তে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর ভিটামিন, খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত সবার। তাই বলে কোনো কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না।
• বয়োবৃদ্ধ, রোগী, হজমের গোলমাল রয়েছে কিংবা কিডনি জটিলতা আছে, এমন ব্যক্তিরা ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। যারা এ মুহূর্তে ঘরবন্দী এবং ঘরে রোদ পান না, তাঁরা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কোন খাবারে কোন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন: মিষ্টিকুমড়া, স্কোয়াশ, গাজর, মিষ্টি আলু, পাতাওলা শাক এবং আম।
ভিটামিন সি: সাইট্রাস ফল (লেবু বা টকজাতীয় ফল), স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, কাঁচা মরিচ, টমেটো।
ভিটামিন ই: উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, শস্যজাতীয় খাবার।
সেলেনিয়াম: ডিম, মাশরুম, পালংশাক, মুরগির মাংস।
ভিটামিন ডি: কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, যেমন দই। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, যেমন স্যামন, টুনা, সার্ডিন মাছেও ভিটামিন ডি রয়েছে। সূর্যরশ্মিতে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তাই ঘরবন্দী থাকলেও বারান্দায় বা উঠোনে গিয়ে ত্বকে রোদ লাগানোর চেষ্টা করুন।
লেখক: পুষ্টিবিদ পিপলস হাসপাতাল, খিলগাঁও, ঢাকা