দেশের এক কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আজ শনিবার সকাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টিকা পেতে আগে থেকে কোনো ধরনের নিবন্ধন কিংবা কাগজপত্র লাগছে না। জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, এমন ব্যক্তিরাও আজ নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে টিকা নিতে পারছেন। শুধু নিজের অথবা পরিচিত করো একটি মুঠোফোন নম্বর থাকলে টিকা নেওয়া যাচ্ছে। যতক্ষণ মানুষ থাকবে ততক্ষণই টিকা দেওয়া হবে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন সায়মা আক্তার (১৮)। বাংলামোটরে থাকেন তিনি। আজ সকাল নয়টার দিকে করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা দিয়েছেন পরিবাগের একটি কেন্দ্রে।
সায়মা বলেন, তিনি প্রথমে আজ সকাল ছয়টার দিকে টিকা কেন্দ্রে যান। টিকা দেওয়ার জন্য লাইন কত বড় হবে তা জানা ছিল না তাঁর। তাই আগেই চলে গিয়েছিলেন। তবে সকাল নয়টার দিকে টিকা দেওয়া শুরু হয়। তিনি লাইনের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। টিকা দিতে কোনো ঝামেলা হয়নি। আগে টিকা নিয়ে মনে ভয় ছিল, সে ভয়ও কেটে গেছে।
সায়মা জানালেন, তাঁর মা এবং ছোট বোন আগেই টিকা দিয়েছেন। ছোট বোন যে স্কুলে পড়ে সেখানেই টিকা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ ২৬ মার্চ একই কেন্দ্রে দিতে হবে বলে কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দুপুর ১২টায় রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার খান হাসান আদর্শ প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, টিকা কার্ড ও টিকা ফুরিয়ে গিয়েছে। কর্মীরা কার্ড ও টিকা আনতে হাতিরপুলে একটি কেন্দ্রে গেছেন। কেন্দ্রটিতে সকাল নয়টায় টিকা দেওয়া শুরু হয়। দুপুর ১২ পর্যন্ত ৪২১ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ব্র্যাকের পাঁচজন কর্মী, একজন আনসার সদস্যকে টিকা গ্রহীতাদের তথ্য সংগ্রহ ও কার্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য লেখার কাজ করতে দেখা যায়। তাদের সহযোগিতা করছিলেন স্থানীয় দুজন স্বেচ্ছাসেবক। স্কুলের ভেতরে নারী ও পুরুষ বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছিল।
সোয়া ১২টায় খান হাসান আদর্শ প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী টিকা নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি জানতেন না, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় টিকা নেওয়া যাবে কি না। তিনি ব্র্যাকের কর্মীর কাছে নিজের শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানান এবং জানতে চান তিনি টিকা নিতে পারবে কি না। তখন দ্বিধায় পড়ে যান ব্র্যাকের কর্মী। তিনি বিষয়টি পুরোপুরি জানতে স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে যান এবং দুই মিনিট পরে ফিরে এসে জানান, ওই নারী টিকা নিতে পারবেন।
টিকাদান উপলক্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে সকাল থেকে ট্রাকে বাউল শিল্পীদের গান শুরু হয়। চারপাশে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
সূচনা কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে বাসার গৃহকর্মীকে টিকা দিতে নিয়ে গিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মহীয়ান দীপ্ত। প্রথম আলোকে মহীয়ান বলেন, ‘বাসার গৃহকর্মীর জন্মনিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ড নেই। কেন্দ্রে যাওয়ার পর একটি মুঠোফোন নম্বর দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তাই আমি আমার মুঠোফোন নম্বর ও গৃহকর্মীর কাছ থেকে জেনে তাঁর জন্ম তারিখ একটি কাগজে লিখে দিয়েছি। তারপর আর কোনো ঝামেলা হয়নি।’