সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যাসন্তানটি আইসিইইউতে। মা ফিরে আসবে, সেই অপেক্ষায় যমজ দুই শিশুসন্তান।
পৌনে তিন বছর বয়সী যমজ রুদ্র আর ধ্রুব বুঝতে পারছে না, তাদের মা মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকায় কয়েক দিন ধরেই তো মা বাড়ি ফিরছিলেন না। তাই তারা ধরেই নিয়েছে, মায়ের কাজ শেষ হলেই বাড়ি ফিরবে। খেলতে খেলতে মাঝেমধ্যে জানতে চায়, মাম্মাম কবে আসবে? আসে না কেন?
রুদ্র আর ধ্রুব রিফাত সুলতানার দুই ছেলে। গত শুক্রবার বিকেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সহযোগী প্রযোজক রিফাত সুলতানা (৩০)।
রুদ্র আর ধ্রুব এখন আছে রাজধানীর বনশ্রীতে তাদের চাচির কাছে, এ কথা জানিয়ে রিফাত সুলতানার দেবর মুশফিকুল ইসলাম বলেন, মা আর ফিরবে না, এত সব বোঝার বয়স হয়নি ওদের। গত কয়েক দিন তারা মা ছাড়াই ছিল। তাই হয়তো ধরে নিয়েছে মা ফিরবে।
রিফাত সুলতানার মায়ের বাড়িও বনশ্রীতেই। মুশফিকুল ইসলাম জানালেন, দুই পরিবারের সদস্যরা মিলেই রুদ্র ও ধ্রুবকে দেখাশোনা করছেন।
রিফাত সুলতানা শুক্রবার সকালেই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি মারা যান। মুশফিকুল ইসলাম জানালেন, নবজাতক মেয়েটি এখন আছে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নবজাতকদের আইসিইউতে। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুটির অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো।
মুশফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক জটিলতার কারণে ভাবি রিফাত সুলতানাকে নিয়ে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে। ভাবি যখন মারা যান, তখন আমার ভাই একাত্তর টেলিভিশনে কর্মরত নাজমুল ইসলামও করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর তখন আমার মা করোনা পজিটিভ হয়ে রাজধানীর আরেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। মা এখনো হাসপাতালের আইসিইউতেই আছেন। ভাবি মারা গেছেন, এ খবর এখনো তাঁকে জানানো হয়নি। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলে মাকে ভাবির খবর জানানো হবে। বুঝতেই পারছেন আমাদের পরিবারের অবস্থা।’
রিফাতের স্বামী নাজমুল ইসলাম হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছেন। তবে তাঁর করোনা নেগেটিভ হয়েছে কি না, সে টেস্ট করানোরও সুযোগ পাননি। গতকাল রিফাত সুলতানাকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সন্তান জন্ম দিয়েই এবং কোলের দুই সন্তান রেখে রিফাতের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের স্বল্প পরিচিত বন্ধুরাও।
ব্র্যাকের পরিচালক (জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি) নবনীতা চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সদ্যজাত নবজাতক ও কোলের দুই শিশুকে রেখে যে মা মারা যান, তিনি মারা যাওয়ার সময় কী ভাবতে থাকেন? ওপারে শান্তিতে থাকতে পারেন ওই মা?’