করোনার খাওয়ার ওষুধ মলনুপিরাভিরকে ‘গেমচেঞ্জার’ বলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেছেন, করোনা নিরাময়ে যে ওষুধটির জন্য চিকিৎসকেরা অপেক্ষা করেছিলেন, তার অভাব পূরণ করবে মলনুপিরাভির। এটা পরিস্থিতি পাল্টাতে সহায়তা করবে। ওষুধটি বাংলাদেশের বাজারে আনার জন্য তাঁরা ওষুধ কোম্পানি এসকেএফকে ধন্যবাদ জানান।
আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনা দুঃস্বপ্নের মতো। গত বছর এপ্রিল-মে মাসে চিকিৎসকেরা যখন করণীয় নির্ধারণ করতে পারছিলেন না, তখন এসকেএফ বাজারে রেমডেসিভির এনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। চিকিৎসকেরা ওষুধের অগ্রযাত্রা অনুসরণ করছিলেন। তাঁরা একটি ওষুধের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। মলনুপিরাভির বাজারে আনার জন্য এসকেএফকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা চিকিৎসায় আরও ভালো ফল হয়তো এখন পাব।’
নতুন এ ওষুধের বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু ও ট্রায়ালের ইতিহাস নিয়ে অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন। মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের বিস্তার কীভাবে ঘটে, নতুন এই ওষুধ কীভাবে সেই ভাইরাসকে পরাস্ত করে, তা তিনি ব্যাখ্যা করেন। এরপর তিনি ওষুধটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষা (ট্রায়াল) ও তার ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন নির্ধারিত মাত্রায় ওষুধ খাওয়ার পর করোনাভাইরাসের পরিমাণ আরটিপিসিআর পরীক্ষায় শূন্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।
তবে ওষুধটি যৌক্তিকভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, করোনার উপসর্গ থাকলেই কেবল ওষুধটির ব্যবহার শুরু করতে হবে। মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ থাকলেই ওষুধটি ব্যবহার করতে হবে। তীব্র উপসর্গে এ ওষুধ ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়নি। গর্ভবতী বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের এ ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না।
কিছু ক্ষেত্রে আরটিপিসিআর পরীক্ষাতেও করোনা শনাক্ত হয় না, টিকা দেওয়া ব্যক্তি এ ওষুধ সেবন করতে পারবেন কি না—এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন সেমিনারে উপস্থিত চিকিৎসকেরা। রোবেদ আমিন বলেন, উপসর্গ না থাকলে (অ্যাসিমপ্টোমেটিক) বা আরটিপিসিআর পরীক্ষায় রোগ শনাক্ত না হলে কাউকে এ ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে করোনার টিকা দেওয়া থাকলে এ ওষুধের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে এখনো গবেষণা ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে অনুষ্ঠান শেষে রোবেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, টিকা দেওয়া ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। আরটিপিসিআর পরীক্ষায় তাঁর রোগ শনাক্ত হলে তাঁকে এ ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া যাবে।
সেমিনারে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হারিসুল হক বক্তব্য দেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ওষুধটি দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে আনার জন্য এসকেএফকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসকেএফের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) ডা. মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ওষুধটি বিদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসকেএফের এ উদ্যোগ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।