বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুম এ পর্যন্ত ১০৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন (বাঁয়ে)। গত মঙ্গলবার ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামে।

ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি–কাশি। করোনার অন্য উপসর্গও আছে। তবু নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ নেই কারও। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের লোকও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানই বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেছেন।

তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুম। তবে হুট করে মাঠে নেমে পড়েননি তিনি। নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ১৫ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১০৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২৯ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের ২২ গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। চলতি মাসে কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হয়। একজন মারাও যান। জ্বর, সর্দি–কাশিও বাড়ছে। বেশির ভাগ লোক সাধারণ ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু কেউ পরীক্ষা করাচ্ছেন না। তাতে সংক্রমণ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

চেয়ারম্যান জানান, এ অবস্থায় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা নেওয়া এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। তখন তিনি নিজেই নমুনা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) কাছে প্রশিক্ষণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। ১০ জুলাই তাঁকে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়। হাসপাতালে গিয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা শাহিন কবির এবং ওই কেন্দ্রের এক কর্মী আরিফুর রহমান সিকদারও প্রশিক্ষণ নেন।

১৫ জুলাই থেকে নিজ এলাকায় নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তাঁরা। প্রথম দিন ১২ জনের নমুনা নেন। গত ১৪ দিনে তাঁরা ১০৮ জনের নমুনা নিয়েছেন। এর মধ্যে এক পরিবারে চারজনসহ ২৯ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। নমুনা জমা দেওয়ার এক দিন পরই ফলাফল দিয়ে দেয় উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

আবদুল্লাহ আল মাসুমের বয়স ৩৮ বছর। বাড়ি হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামে। যশোর এম এম কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন। ২০০৪ সালে বিমানের জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬ সালে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। ২০০৯ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম গোবিন্দপুর গ্রামের কাজী আফরোজের বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী আয়েশা বেগমের নমুনা সংগ্রহ করছেন। আয়েশা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ দিন ধরে জ্বর–ঠান্ডা। এ অবস্থায় ২২ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন চেয়ারম্যান এসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করছেন, এতে আমি খুশি।’

চেয়ারম্যান মাসুম জানান, পল্লিচিকিৎসক ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের কর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে করোনার উপসর্গ আছে, এমন রোগীদের তথ্য দেন। তিনি মুঠোফোনে কথা বলে দুই সহযোগীকে নিয়ে নির্দিষ্ট বাড়িতে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা মো. শামিম কবির জানান, নমুনা সংগ্রহের জন্য চেয়ারম্যান মাসুমকে কিছু সরঞ্জাম দিয়েছেন তাঁরা। চেয়ারম্যানের উদ্যোগটি রোগনিয়ন্ত্রণে কাজে লাগবে বলে মনে করেন তিনি।